হাওড়া ও কলকাতা: ওমিক্রনকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ৩ জানুয়ারি পরিস্থিতি বিচার করে আংশিক লকডাউনের পথে হেঁটেছে রাজ্য। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। মেলা-উৎসব-জমায়েতেও রাশ টেনেছে রাজ্য। কিন্তু, বাজার? সাত সকালে থলি হাতে বাজার যাওয়া বাঙালির অভ্যেস। রবিবার হোক বা সোমবার, সপ্তাহের যে-কোনওদিনে বাজার করতেই হবে। নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও কোথায় সেই সচেতনতা? অন্তত, কলকাতা বা হাওড়ার বাজার তো সেকথা বলছে না।
সোমবারের সকালে হাওড়া বাজারে ঢুঁ মারে TV9 বাংলা। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই কেবল থিক থিক করছে কালো কালো মাথা! কোথায় বিধিনিষেধ! কোথায়ই বা করোনাবিধি! ক্রেতা হোন বা বিক্রেতা, মাস্ক পরতে অনীহা সকলের। বরং থলি হাতে গাদাগাদি করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য সকলে! অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক। কয়েকজন যা মাস্ক পরেছেন তাও, কারোর থুতনিতে ঝুলছে, কারোর গলায়। কেউ বা চাদর চাপা দিয়েছেন মুখে। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখতে পেয়েই মাস্ক পরেছেন কেউ কেউ।
এখানেই শেষ নয়, দেখা নেই প্রশাসনিক কোনও আধিকারিকেরও। যেন জেগে ঘুমাচ্ছে প্রশাসন! রাস্তায় বা বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না রয়েছে পুলিশের দেখা না কোনও সচেতনতা প্রচার! কেন এমন গা-ছাড়া মনোভাব? আর কবেই বা হুঁশ ফিরবে! উত্তর নেই।
বাজার করতে আসা এক ক্রেতার কথায়, “বাজার নিয়ে এখনও কিছু বলেনি। হঠাৎ করে যদি লকডাউন করে দেয়, তবে খাব কী! না খেয়ে কাটাতে হবে তো! তাই আগেভাগে সেরে রাখছি।” এদিকে মাস্কহীন এক ক্রেতার মন্তব্য, “আসলে এত ভিড়ে মাস্ক পরলে দমবন্ধ লাগে। তাই খুলে পকেটে রেখেছি। তাছাড়া টিকা তো নেওয়াই হয়ে গিয়েছে।” কিন্তু, টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াবেন? তাহলে কি কোভিড আর সংক্রমিত হতে পারে না?
বাজারের এক সবজি বিক্রেতার কথায়, “এভাবে যদি, হঠাৎ করে সব বন্ধ করে দেয়, আমাদের কীভাবে দিন চলবে! আমরা খাব কী! আমাদের তো এটাই আয়! ” অন্য আরেক বিক্রেতা বলছেন, “পুলিশ কোনও প্রচার চালায়নি। আমরা এক বাজারে কতজন বসতে পারব বা কী ব্য়াপার, কিছুই জানি না। তাহলে কি বিক্রি বন্ধ রাখব! আমাদের দায়িত্ব তবে কে নেবে?”
কেবল হাওড়া বাজার নয়, খাস কলকাতার বড় বড় বাজারগুলিরও একই ছবি। যদুবাবুর বাজার, মানিকতলা বাজারে দেখা গেল মানুষ হুড়মুড়িয়ে জিনিস কিনছেন। ক্রেতা হোন বা বিক্রেতা, অনেকেই মনে করছেন, ওমিক্রন যেহেতু মারক নয়, কেবল দ্রুত সংক্রামক তাই বিশেষ চিন্তার কারণ নেই। কিছুজনের দাবি, রাজ্যে যখন, ভোট-মিটিং-মিছিল-উৎসব সবকিছুই হচ্ছে তাহলে বাজার বা পরিবহনে কাটছাঁট কেন?
সুমিত রায় রোজই যদুবাবুর বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। নিত্যদিনের ‘খদ্দের’ বলে দোকানিরাও তাঁকে চেনেন ভালমতো। সুমিতবাবুর কথায়, “করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে লকডাউন খুবই জরুরি। কিন্তু, এটাও তো বুঝতে হবে, আচমকা একটা সিদ্ধান্ত বলবৎ করে দেওয়া যায় না। কত মানুষের রুজি রোজগার জড়িয়ে রয়েছে। যেখানে বড়দিন থেকে বর্ষবরণ সবই হচ্ছে, সেখানে এইভাবে বাজার-দোকান বন্ধ করলেই কি সংক্রমণ ঠেকানো যাবে? ক্ষতি তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরই।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যে দিনকে দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা পরিস্থিতি। রাজ্যে এক লাফে দেড় হাজার বাড়ল সংক্রমণ। কলকাতার অবস্থা দেখে কার্যত আঁতকে উঠছেন চিকিৎসকরাই। রবিবার একদিনে রাজ্যে করোনা সংক্রমিত হলেন ৬ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৯৪ জনই কলকাতার। রবিবার স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্যই।
একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। গত একদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২ হাজার ৪০৭ জন। শতাংশের হারে ৯৭.৭৭ শতাংশ। পজিটিভি রেটও বাড়ছে হু হু করে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রেট ১৫.৯৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৮,৬৩৩।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal on COVID19: ‘ওসব শিক্ষা-ফিক্ষা ডকে উঠে যাবে!’