কলকাতা: বাংলাদেশ কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব। এ রাজ্যের শাসক দল কেন এ নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। এবার তৃণমূল সরকারের নীরবতাকে কটাক্ষ করে ২০১৪ সালের এক রিপোর্টকে টেনে এনে টিপ্পনী করলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty)।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশের ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের নীরবতাকে কটাক্ষ করে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বলেন, “এপারে হোক বা ওপারে হোক, মৌলবাদীদের আক্রমণ মানবতা বিরোধী। ধর্ম, জাতের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।” এর পর বাংলাদেশের ঘটনার নিন্দা করে তিনি যোগ করেন, “বাংলাদেশে যেমন বামপন্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করছেন, এপার বাংলাতেও তার প্রতিবাদ করছি।”
এর পরই সুজন বাবুর অভিযোগ, “রাজ্য সরকার এই ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে। এটা তো ঠিক যে রাজ্যের শাসক দল যারা রাজ্যসভার সাংসদ করে এমন লোকেদের পুরস্কৃত করেছে যাঁদের মারফত সারদার টাকা বাংলাদেশে জঙ্গিদের কাছে পৌঁছেছে।”
যদিও এদিনই সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, বাংলাদেশের ঘটনা তাদের বিদেশনীতির বিষয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে রাজ্যের। তবে তা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, মানবতার ভিত্তিতে। তিনি আবার অভিযোগ করে বলেন, “এটা দুর্ভাগ্য যে সিপিএম কিছু বলছে না। আমরা নজর রাখছি।”
এদিকে সুজন বিজেপি-র দিকেও আঙুল তুলে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের ঘটনা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে আরএসএস ও বিজেপি। তাই এ রাজ্যের বিরোধী নেতা বলছেন (পড়ুন শুভেন্দু অধিকারী) বাংলাদেশের ঘটনা আমাদের ভোট বাড়াবে। বাংলাদেশের ঘটনা দিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল ভোট বাড়ানোর কৌশল করছে বলে অভিযোগ করেন সিপিএম নেতা। বলেন, মৌলবাদের বিরুদ্ধে যারা থাকবে, আমরা তাদের পক্ষে থাকব।
উল্লেখ্য, সুজনবাবু এদিন বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে টেনেছেন ২০১৪ সালের বাংলাদেশ গোয়েন্দার একটি রিপোর্টের কথা। সারদা কাণ্ডে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, সে সময় বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করে, তাদের দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে সারদার টাকা লাগানো হচ্ছে। আর তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তৃণমূলের তৎকালীন সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। এ ব্যাপারে ভারতের কাছে সরকারি ভাবে অভিযোগও জানিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে রাজ্যের শাসক দলকে কটাক্ষ করলেন সুজন চক্রবর্তী।
অভিযোগও ওঠে তৃণমূল সাংসদ ইমরানের মাধ্যমে এ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছয় জামাতে ইসলামি ও নানা শাখা সংগঠনের হাতে। আওয়ামি লিগ সরকার জামাতের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরুর অব্যবহিত পরে বাংলাদেশে দাঙ্গা, নাশকতা শুরু করে মৌলবাদীরা। সরকার জামাতকে নিষিদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে একটি মৌলবাদী সংগঠন হঠাৎ গজিয়ে ওঠে। তারা ঢাকা অবরোধ করে সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্র দাবি করে, সেই সব কাজে ইন্ধন জোগাতে সারদার টাকাও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে তারা ভারত সরকারকে তদন্তেরও আর্জি জানিয়েছিল।
এদিকে এ নিয়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের প্রতিক্রিয়া, “আমরা হিন্দু। বাংলাদেশের হিন্দুদের পক্ষে কথা বললে সস্তা রাজনীতি! শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন ঠিক বলেছেন।’ সুজনবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে এখনও অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আরও পড়ুন: Duare Ration : ‘দুয়ারে নয়, দোকানে রেশন’, অসন্তোষ আরও বাড়ছে ডিলারদের মধ্যে