বিধাননগর: খোলা জমিতে পড়ে রয়েছে রাজ্যের আবর্জনা! যে যখন পারছে এসে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। আবর্জনার সেই জমির পাশ দিয়েই বইছে কাঁচা নর্দমা। দেখেই বোঝা যায়, নর্দমা পরিষ্কার হয় না। এলাকায় দেখা নেই সাফাইকর্মীদের। আর এই ‘গা-ছাড়া’ মনোভাবেই বিধাননগর পৌরনিগমে দেখা গিয়েছে ডেঙ্গু (Dengue) আতঙ্ক। একের পর এক পরিবার আক্রান্ত হয়েই চলেছে ওই পৌরনিগম এলাকায়।
সূত্রের খবর, বিধাননগর পৌরনিগমের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাগুইআটি অর্জুনপুর এলাকা জুড়ে একাধিক পরিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, দেখা গিয়েছে, একই পরিবারের সকল সদস্যই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু, পুরসভার কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ। এলাকায় দেখা যায় না কোনও সাফাইকর্মীকে।
স্থানীয় এক মহিলার কথায়, “আমাদের এলাকায় সাফাইকর্মীদের দেখা যায় না। তারা আসলেও লোকে বোঝে না। খোলা জমিতে যে যেমন পারে ময়লা ফেলে দেয়। ঘর থেকে ছুড়ে ছুড়ে এই জমিতে ময়লা ফেলে। পরিষ্কারের বালাই নেই। পুরসভা থেকেও লোকও আসে না। বলেও কোনও লাভ হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসে এক-আধবার দেখা যায়। মাঝেমধ্যে আসে মশা মারার তেল দেয়, চলে যায়। শেষ কবে এই জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে কেউ বলতে পারবে না।”
অন্য আরেক এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে তিনি ছাড়াই সকলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তাঁর মেয়ে, ছেলে ও স্বামী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশবন্ধুনগর হাসপাতালে ভর্তি। শুধু ওই পরিবার নয়, অর্জুনপুরের একাধিক পরিবারের ছবিটা এখন এমনই। স্থানীয়দের অভিযোগ, যে খোলা জমিতে ময়লা ফেলা হয়, বারবার বলার পরেও সেখানে পুরসভা কোনও বোর্ড লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। আর ওই ময়লা জমি ও পাশের খোলা নর্দমাই ডেঙ্গু মশার আতুঁড়ঘর বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীর।
যদিও, বিধাননগর পুরনিগমের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এক পুরস্বাস্থ্য আধিকারিককে প্রশ্ন করা হলেও তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। পুরসভার বর্তমান কো-অর্ডিনেটরও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে, এলাকার এক তৃণমূল কাউন্সিলর মন্তব্য করেন, “বোর্ড লাগালেই যদি লোকে ময়লা ফেলা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কি সকলের শান্তি হবে! লাভের লাভ তো কিছুই হবে না। যাদের ফেলার তারা ফেলবেই। আর ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া তো হয়েই থাকে। হবে। তা নিয়ে এত অভিযোগের তো কিছু থাকতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, করোনাকাঁটায়, অলক্ষ্যে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে ডেঙ্গু (dengue)। হুঁশ ফিরছে না প্রশাসনের। রাজ্য জুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে এই একই ছবি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে সাড়ে ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গুতে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্যি হচ্ছে। ডেঙ্গুর দাপট বাড়ছে রাজ্যে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ২৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে বাংলায় ডেঙ্গুর কবলে পড়েন ৬৫০ জন। গত বছর এই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১৯।
গত সপ্তাহ থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তাতে উত্তর ২৪ পরগনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬৩ জন। কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৯২ জন। হাওড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২২। নদিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩২ জন। দার্জিলিংয়ে এই সংখ্যাটা ২৬। এরপরই রয়েছে মালদহের স্থান। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৭৩। উত্তর দিনাজপুরে ১৬।
ডেঙ্গুর এই সংখ্যাবৃদ্ধি ক্রমেই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনের। যদিও, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “ডেঙ্গু এখন হচ্ছে ঠিকই। তবে সেই সংখ্যাটা এখনও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়নি। সকলে সাবধানে নিয়ম মেনে থাকলেই ডেঙ্গু ছড়াবে না।” অভিযোগ উঠছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হতেই ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনে যাচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরাও। জমা জল থেকেই ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই বছর প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্যে ৯০০ ছাড়িয়েছে। রোজই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
ডেঙ্গুর উপসর্গ
যে কোনও রোগেরই উপসর্গ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে রোগ মোকাবিলার প্রথম ধাপটাই আপনি জেনে গেলেন। উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সময় মতো রোগ নির্ণয় করা দরকার। চোখের ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, বমি, হাড়ের ব্যথা, ফুসকুড়ি, পেশী ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি বা অস্থিরতার মতো লক্ষণগুলি দেখা দিলে সতর্ক হোন। এগুলি ডেঙ্গুর উপসর্গ।
ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে বিপদজনক ডেন ২ ও ডেন ৩। এ রাজ্যে এই দুই সেরোটাইপেরই বাড় বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেখা গিয়েছে ডেন ২ সব থেকে মারাত্মক। এর পিছনেই রয়েছে ডেন ৩। মাইক্রো বায়োলজিস্টরা বলছেন, ‘ডেন ২ ডেন ৩ মারাত্মক। অথচ এবারও শোনা যাচ্ছে এই দু’টো এ রাজ্যে ভালই পাওয়া যাচ্ছে। ডেন ৩ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’ সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর ছয় থেকে সাতদিনের মধ্যে সেরে যায়। হেমারেজিক ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। ডেন ২ বা ডেন ৩ ঘটাতে পারে ডেঙ্গু হেমারেজ। এর ফলে শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
আরও পড়ুন: Weather: বঙ্গোপসাগরে আরও একটি ঘূর্ণাবর্তের আশঙ্কা, হিমেল পরশেও ঝরতে পারে ঘাম