কলকাতা: ‘সিপিএম সর্বহারা নয়, সর্বহারা কে জানেন? বাবুল সুপ্রিয়…’ বাবুল-দিলীপ দ্বৈরথের অধ্যায়ে এক নয়া পর্বের সূচনা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
মঙ্গলবার কলকাতা পোর্ট ডিসি অফিসের সামনে চায়ে পে চর্চা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন দিলীপ। মঞ্চে মাইক হাতে শাসকদলের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন, যদিও পুরোটাই কৌতুকের ছলেই। তৃণমূলের ত্রিপুরা-অভিযান নিয়েও একের পর এক বাণ ছুড়েছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই আসে বাবুল সুপ্রিয়র নাম।
দিলীপ বলেন, ” বাংলায় বেইমানের সংখ্যা বাড়ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীজি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করেছিলেন, তিনি বেইমানি করেছেন। নরেন্দ্র মোদী বাবুল সুপ্রিয়র ওপর ভরসা করেছিলেন, তিনিও বেইমানিই করলেন। আজকে কোথায় দাঁড়িয়ে বাবুল সুপ্রিয়? ওঁর গাওয়া গান আজকে ওঁকেই শুনতে হচ্ছে ত্রিপুরাতে!” মঞ্চে যখন দিলীপ একথা বলছেন, বাকিরা তুলেছেন হাততালির ঝড়।
দিলীপের সংযোজন, “লোকেই বলছেন, এই বাবুল আর নয়! আমি এক বন্ধুকে বলছিলাম, আপনারা ভাষণ দেন সিপিএম সর্বহারা, সর্বহারা! দেখেছেন কে সর্বহারা? বাবুল সু্প্রিয় সর্বহারা। আমরা ওঁকে মাথায় করে রেখেছিলাম। যা চেয়েছিলেন, তাই দিয়েছিলাম। কিন্তু কী করলেন…” দিলীপ বলেন, “এখন বাবুল তৃণমূলে গিয়েছেন, চোরেদের দলে গিয়েছেন।”
বাবুল-দিলীপ টানাপোড়েন রাজনৈতিক মহলে চর্চিত। এর আগেও একাধিকবার বাবুলকে বিঁধেছেন দিলীপ। সে বাবুল যখন বিজেপিতে ছিলেন, তখন থেকেই তাঁদের শীতল লড়াই বঙ্গ রাজনীতিতে সবার জানে। কিন্তু দিলীপের কোনও কথাতেই এখন আর বিশেষ আমল দিতে চান না বাবুল। দিলীপ প্রসঙ্গে স্পষ্ট জানালেন, “ওঁ সকালে যেটা বলেন, সেটা সারাদিন মানুষ এনজয় করেন। ওঁকে ওঁর মত বলতে দিন। ওঁ কথায় কোনও কিছু এসে যায় না।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও সরাসরি বাবুলকে তোপ দেগে বলেছিলেন, “হ্যাঁ, একটা ব্যাঙ কোথাকার! যতদিন বিজেপিতে ছিলেন ততদিন বিজেপির ব্যাঙ ছিলেন। বিজেপির মতো মহাসমুদ্রে টিকতে পারেননি। তাই ডোবায় গিয়ে ডুব দিয়েছেন।” পাশাপাশি, দিলীপ আরও বলেন, “যে বা যাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন তাঁদের ভয় দেখিয়ে বা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের যাওয়ায় বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না।”
দলে থাকতেই দিলীপ-বাবুল সম্পর্ক বিশেষ ভাল নয়। তৃণমূলে সদ্য যোগদানের পর দিলীপ ঘোষকে বর্ণপরিচয় উপহার দেওয়ার কথাও বলেন বাবুল। পাল্টা তাঁকে ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ বলে আক্রমণ করেন দিলীপ। এমনকী, বাবুলের দলত্যাগের পর দিলীপ বলেছিলেন, “উনি তারকা। দলের হননি কখনও। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আবেগ দিয়ে রাজনীতি করেন।”সেপ্টেম্বরেই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন বাবুল সুুপ্রিয়। তার আগেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন তিনি।
দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বিজেপিতে থাকলেও সংগঠনের সঙ্গে গাঁটছড়া কখনই মজবুত হয়নি বাবুলের। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর যে বিষয়টি আরও বিপক্ষে যায় আসানসোলের সাংসদের। এমন কানাঘুষোও শোনা যায় যে, বঙ্গ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ভূমিকায় খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। যে কারণে মন্ত্রিত্ব হারা বাবুলকে সংগঠনের কোনও ভূমিকাতেও দেখা যায়নি। ফলে পদ্ম ঘরে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন এই গায়ক-সাংসদ।
মন্ত্রিত্ব হারানোর পর তিনি নিজে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে তার বহিঃপ্রকাশ সোশ্যাল মিডিয়াতেই বারংবার দেখা যায়। সঙ্গে বাবুল এটাও দাবি করেন যে তিনি কখনই বিজেপি ছাড়া অন্য কোনও দলকে সমর্থন করবেন না। যদিও সেসব এখন অতীত। আপাতত নতুন ছকে বাবুল। একদা প্রতিপক্ষ অভিষেকের হাতে হাত রেখে নতুন পথ চলার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
এর আগেও বাবুলকে একাধিকবার বিঁধেছেন দিলীপ ঘোষ। তবে সে সবকে আমল না দিয়ে দিলীপকে বিঁধে বাবুল বলেন, “ওঁ একজন এন্টারটেনমেন্ট ক্যারেক্টার।”