তন্ময় প্রামাণিক: শনিবার রাত্রিবেলা। হঠাৎই পাভলভের (Pavlov Hospital) দিক থেকে শোনা গেল প্রবল চিৎকার ও কান্নার শব্দ! কী হয়েছে? শনিবার জানা গেল সেই কান্না ও মর্মভেদী চিৎকারের সূত্র। আর তাতে যা জানা গেল তাতে শিহরিত হবেন আপনিও। মানসিক হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের গেট ছিল হাট করে খোলা। আর সেই গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে একটি পাগলা কুকুর (Dog)। তার পর রীতিমতো হুলুস্থুল হাসপাতালে।
কুকুরটি খুবলে, কামড়ে দিল একের পর এক মানসিক রোগীকে। রোগিণীদের চিৎকারে ছুটে এলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যদিও তাতেও তাড়ানো যায়নি কুকুরটিকে। সেই হাসপাতালেই পিটিয়ে মারা হল কুকুরটিকে। এদিকে কুকুরের কামড়-আঁচড়ে গুরুতর আহত হলেন ৮ রোগিণী। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল হাসপাতালে।
জানা গিয়েছে, চতুর্থীর সারারাত ধরে খোলা পড়ে ছিল পা মহিলা ওয়ার্ডের গেট। সেই গেট দিয়ে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ঢুকে পড়ে একটি পাগলা কুকুর। তার পর সে একের পর এক মানসিক রোগিণীকে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করতে শুরু করে। রোগীদের আ়র্ত চিৎকারে ওই ওয়ার্ডে ছুটে যান কর্মীরা। কিন্তু কুকুরটিকে তাড়ানো যায়নি। কুকুরটিকে তাড়াতে না পেরে তার হিংস্র আক্রমণ থেকে বাঁচতে ওয়ার্ডের মধ্যেই গেট আটকে সেটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন কয়েকজন। সবমিলিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড সরকারি মানসিক রোগীদের চিকিৎসার হাসপাতাল পাভলভে।
জানা গিয়েছে, কুকুরের কামড়ে গুরুতর জখম হন চিকিৎসাধীন মোট আটজন মানসিক রোগী। কয়েকজন কর্মী এবং কয়েকজন রোগী ছুটে আসেন তাঁদের চিৎকার শুনে। কিন্তু হিংস্র কুকুরের কামড় থেকে বাকিদের বাঁচাতে গিয়ে তাঁদেরও কয়েকজন আহত হন। সবমিলিয়ে ভোররাতে পাভলভ হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড থেকে ভেসে আসে চিৎকার, কান্নাকাটির শব্দ। আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন রোগীরা। হুলুস্থুল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে কুকুরের কামড়ে গুরুতর আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়েছে বলে পাভলভ কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর। তবে অভিযোগ উঠেছে, গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষের একাংশ। ওই মহিলা ওয়ার্ডে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওয়ার্ডের গেট সবসময় বন্ধ রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মীদের থাকার কথা।
প্রশ্ন উঠছে, সেখানে কেন এবং কীভাবে মধ্যরাতে মহিলা ওয়ার্ডের গেট খোলা ছিল? এটা কি প্রতিদিন এভাবেই খোলা থাকে? গেট খোলা রেখে কেউ কি ঢুকেছিলো মহিলা ওয়ার্ডে? নিরাপত্তা কর্মীরা কোথায় ছিলেন সে সময়? কীভাবে কুকুরটি ঢুকে পড়ল খোদ ওয়ার্ডে? কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। কেন পিটিয়ে মেরে ফেলতে হল? যদি কুকুরটি পাগল হয় তাহলে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকলো কিভাবে? নিরাপত্তা কর্মীদের নজরে পড়ল নাই বা কেন?
এতগুলো প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। হাসপাতাল সুপার গণেশ প্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আটজন নয়, সাত জনকে কুকুর কামড়েছে। সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুপারের অবশ্য দাবি, কুকুরকে পিটিয়ে মেরা ফেলা হয়নি। আর গেট-ও বন্ধ ছিল। কোনওভাবে গেট দিয়ে গলে হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিল।