কলকাতা: স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে বড় রদবদল। অজয় চক্রবর্তীকে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদ থেকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যার ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসেস (DHS) পদে পাঠানো হল। বৃহস্পতিবার বিকেলে বদলির এই নির্দেশিকা জানাজানি হওয়ার পর থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তুঙ্গে উঠেছে প্রভাবশালী যোগের জল্পনা। কারণ শুধু স্বাস্থ্য অধিকর্তা সরেননি। স্বাস্থ্য ভবন লাগোয়া হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান-সহ পুরো কমিটিই বদলে গিয়েছে। স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ডের সদস্য তালিকায় আর নাম নেই নির্মল মাজি, শান্তুনু সেনের। বদলে অভিষেক হয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড়ে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী রেজাউল করিমের। নিয়োগ বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। আর এই পুরো বদলি বৃত্তে প্রভাবশালী যোগ প্রতি বিন্দুতে জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক সংগঠনের সদস্যরা। অজয় চক্রবর্তীর বদলিও ব্যতীক্রম নয় বলেই মত তাঁদের।
স্বাস্থ্য অধিকর্তার বদলিতে প্রভাবশালী যোগ যে রয়েছে সে কথা প্রমাণে চিকিৎসদের একাংশ বলছেন, মাসখানেক আগেই ডিএইচএসের অন্তর্গত জনস্বাস্থ্য, হাসপাতাল প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণকে ভেঙে তা পৃথক ডিরেক্টরেট করে নতুন তিনজনকে ডিরেক্টর পদে বসানো হয়। ঘটনাচক্রে, তাঁদেরই মধ্যে থেকে হাসপাতাল প্রশাসনের ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ নিয়োগীকে আপাতত ডিএইচএসের ভার দেওয়া হয়েছে। এই বদলের কারণ হিসাবে অনেকগুলি কারণের মধ্যে তিনটি ঘটনাক্রমের কথা এদিন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের মুখে ঘোরাফেরা করেছে। কয়েক মাস আগে চিকিৎসকদের পোস্টিংয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ স্বাস্থ্য ভবনের অলিন্দে গতি পেয়েছিল। এর পরপরই ডিডি অ্যাডমিনের বদলির নির্দেশ জারি করেন অজয়বাবু। সেই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য দফতরের প্রভাবশালী মহল ভাল ভাবে নেননি বলেই জনশ্রুতি।
বিনামূল্যে ওষুধের তালিকা ৭০০ থেকে তিনশোর ঘরে নামিয়ে এনেছিলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। সেটিও প্রভাবশালী মহলের কাছে অপ্রিয় পদক্ষেপ বলেই শোনা যায়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্গত সাতটি নার্সিংহোমকে পরিকাঠামোয় গরমিল থাকায় তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বীরভূমের একটি নার্সিংহোমকে শুধু ৯৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। তৃণমূল প্রভাবিত নার্সিংহোম মালিকেরা এ নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বলেও শোনা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, অভিযোগের স্তূপে বুধবার বদলির নির্দেশিকায় সম্মতি দেন আধিকারিকরা। স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ আধিকারিকরা মরিয়া ছিলেন, সিদ্ধান্তে যাতে বদল ঘটে। লাভ হয়নি। বদলির নির্দেশিকা যে স্বাভাবিক নয় সে কথা বোঝাতে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, উত্তরকন্যার ডিএইচএস পদমর্যাদায় অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি অজয় চক্রবর্তীকে এমন জায়গায় নিক্ষেপ করা হল যেখানে ওএসডি হিসাবে ইতিমধ্যে বিরাজমান উত্তরবঙ্গ লবির অন্যতম মুখ সুশান্ত রায়।
যদিও এসব বিতর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অজয় চক্রবর্তী। বদলির পর তিনি জানান, “একটা স্থান পরিবর্তন আমাদের কর্মজীবনের অঙ্গ। সুতরাং আমি চেষ্টা করব যাতে নতুন জায়গায় নতুন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি এবং উত্তরবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারি।” এই বদলি নিয়ে সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সজল বিশ্বাস জানান, ‘ডিএইচএস পদটি এতদিন ধরে স্বাস্থ্য দফতরের সর্বোচ্চ পদ ছিল। সেই পদের একজন কর্মকর্তাকে তড়িঘড়ি উত্তরবঙ্গে বদলির কী কারণ তা আমাদের কাছে পরিস্কার নয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরে চিকিৎসক প্রশাসকদের সরিয়ে ক্রমশ ব্যুরোক্র্যাটদের বসানো হচ্ছে। স্বাস্থ্যের মত অত্যন্ত পেশাদারি দফতরের দায়িত্বভার যেভাবে অচিকিৎসক আমলাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিপন্থী। আমরা স্বাস্থ্য দপ্তরকে আমলা নির্ভর করে তোলার এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: CM Mamata Banerjee: ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়ারা কে কোথায় পড়বেন ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, চাকরি দুই শ্রমিককেও