কলকাতা: প্রতাপ নেই। রাজশাসনও বিলুপ্ত। যা রয়েছে তা হল কেবল বনেদিয়ানা। যদিও, বিগত কয়েকবছরে তা ম্লান হতে বসেছিল। সেই পুরনো রীতিকেই এ বার ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী শোভাবাজার রাজবাড়ি। প্রায় তিন পুরুষ পেরিয়ে ফের রাজবাড়ির নহবখানায় বসল সানাই। জানা গিয়েছে সোনার গিনি দিয়েই হবে পুজো (Durga Puja)।
রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনার গিনি দিয়েই পুজো করা হবে এ বার। সপ্তমীর সকালে দেখা যায়, নহবতখানায় বসেছে সানাই। পূর্বের রীতি মেনে সানাই বাজিয়েই চলবে পুজো। সপ্তমীর ভোরে ১০৮ ঘড়া গঙ্গাজল গোলাপ জল সিদ্ধি মধু কেশর জল দিয়ে স্নান করানো হল কলাবউকে । পঞ্চপ্রদীপে সাড়া হল আরতি। রাজবাড়ির বংশধর দেবরাজ মিত্রের হাত ধরলেই ফিরল এই পুরনো রীতি।
প্রশ্ন ওঠে কেন এতদিন বন্ধ ছিল এই রীতি? কেনই বা আচমকা শুরু হল? এ প্রসঙ্গে, দেবরাজ মিত্র জানান, বেশ কয়েক পুরুষ কখনও অর্থনৈতিক কখনও অন্যান্য পারিবারিক জটিলতার কারণে এই পুরনো রীতিগুলি একরকম বাতিল করতে হয়েছিল। তবে, এ বছর নতুন করে সেই রীতিই ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, রাজবাড়ির পুরনো রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত হোক বর্তমান এমনটাই চান রাজপরিবারের সদস্যরা।
কলকাতা শহরের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই রাজবাড়ির পুজো। এবছর এই ঐতিহাসিক পুজো পা দিল ২৬৫তম বছরে। ষষ্ঠীতেই সমাপ্ত হয়েছে মায়ের সাজপর্ব। তবে, এ বাড়িতে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী নন, বরং বাড়ির মেয়ে উমা রূপেই পূজিত হন। প্রতিবার যেমন দর্শকরা ঠাকুরদালান পর্যন্তু যেতে পারেন এই পুজোয়। গত বছর থেকে করোনার জেরে দর্শকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে এবছর লঘু করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
শোভাবাজার রাজ পরিবার দুটোভাগে বিভক্ত। বড় তরফ ও ছোট তরফ। দুই পরিবারের দুটি ভিন্ন ভিন্ন বাড়ি। দুটিতেই দুর্গাপুজো হয়। বড় তরফ মূলত শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দত্তক পুত্র গোপীমোহন দেবের বংশধরেরা। ছোট তরফ হল, রাজা নবকৃষ্ণের নিজ পুত্র রাজকৃষ্ণ দেবের বংশধরেরা। রাজা নবকৃষ্ণ ১৭৫৭ সালে বড় তরফের বাড়িতেই প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। তবে পরবর্তীকালে তিনি ছোট তরফের বাড়িতেও পুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তীকালে রাজকৃষ্ণ দেবের হাত ধরেই বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই পুজো।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: নবপত্রিকা স্নান দিয়ে শুরু সপ্তমীর ভোর, কোভিড বিধি মেনেই বেলুড় মঠে পালিত পুজো