কলকাতা: স্ট্যান্ড রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের (Strand Road fire Accident) জেরে প্রাণ গেল রেলের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের। ৫৯ বছর বয়সী, ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল বরানগরের শ্রীমানিপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
মৃত পার্থ বাবুর পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বরানগরের বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ আগুন লাগে স্ট্যান্ড রোডের পূর্ব রেল দফতরের বহুতলে। তেরো তলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। চার তলায় কাজ করছিলেন পার্থসারথি। কাজ শেষও হয়ে গিয়েছিল তাঁর। আগুন লাগার আগেই নিচেও নেমে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু, পরে আধিকারিকের কথায় ফের উপরে উঠে যান পার্থবাবু। ততক্ষণে আগুন লেগে গিয়েছে বহুতলের একাংশে। ফলে, বহুতলেই আটকা পড়েন পার্থ বাবু ও তাঁর নিরাপত্তা রক্ষী।
আরও পড়ুন: স্ট্র্যান্ড রোড অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত রেলের অনলাইন টিকিট বুকিং পরিষেবা, চালু ইমার্জেন্সি সার্ভার
তাড়াহুড়োয় লিফটে করে নীচে নামতে যান তাঁরা। কিন্তু, আগুন লাগার জেরে ঠিকঠাক কাজ করেনি লিফট। গ্রাউন্ড ফ্লোরে না গিয়ে লিফট সোজা পৌঁছয় তেরো তলায়। লিফটের মধ্যেই দমবন্ধ হয়ে মারা যান পার্থসারথি ও তাঁর দেহ রক্ষী সঞ্জয় সাহানি।
পার্থ বাবুর মৃ্ত্যুতে শোকাহত শ্রীমানি পাড়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরের বছরেই অবসর নিতেন পার্থবাবু। ৫৯ বছরের চাকরি জীবনে এলাকায় হেন কেউ নেই যে তাঁর কাছে এসে সাহায্য চেয়ে পাননি। ‘জনদরদী’ বলে রীতিমতো পরিচিত ছিলেন তিনি। সই-সাবুদ করানো থেকে শুরু করে আর্থিক সাহায্য, বহুজনের জন্য কাজ করতেন তিনি।
আরও পড়ুন: স্ট্র্যান্ড রোডের ‘অভিশপ্ত’ সেই বহুতলে কেন ব্যবহার করা হয়েছিল লিফট? ব্যাখ্যা দিলেন দমকল কর্তা
উল্লেখ্য, স্ট্যান্ড রোডের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে (Strand Road fire Accident) সাত জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। পার্থসারথি ছাড়াও আগুন নেভাতে গিয়ে ঝলসে মারা যান চার দমকলকর্মী এবং এক পুলিশকর্মী। ঘটনাস্থলে, প্রথমে পৌঁছয় দমকলের ৬টি ইঞ্জিন। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় দমকলের আরও ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক ল্যাডার ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পৌঁছে যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার কিছুপরেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখেন তিনি।
রাত এগারোটা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হতাহত এবং নিখোঁজদের উদ্ধারে নামানো হয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। একে একে বের করে আনা হয় মৃতদেহ। আহতদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় এসএসকেএমের ডিজাস্টার ওয়ার্ডে।
মঙ্গলবার সকালে পার্থসারথির বাড়িতে পৌঁছন তৃণমূল (TMC) নেতা তাপস রায়। মৃতের উদ্দেশে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি। প্রসঙ্গত, স্ট্যান্ড রোড কাণ্ডে, বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুয়ো মোটো মামলা রুজু করা হয়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানায়। তদন্তভার নিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ।
এই ঘটনায় কোনও পক্ষের গাফিলতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। অগ্নিকাণ্ডে ৭ জনের একটি সিট গঠন করেছে রাজ্য। ওই বহুতলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিকমতো না থাকার অভিযোগ করেছিল দমকল। হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে ১১সি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi)। মৃতের পরিবারের জন্য, কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা এবং রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ও পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।
PM @narendramodi has approved an ex-gratia of Rs. 2 lakh each from PMNRF for the next of kin of those who have lost their lives due to the tragic fire in Kolkata. Rs. 50,000 would be given to those seriously injured.
— PMO India (@PMOIndia) March 9, 2021