কলকাতা: তিলোত্তমার মৃত্যুতে প্রশ্নের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই তুলেছেন। আর তা করছেন একেবারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাতেই বাড়ছে উদ্বেগ। ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক ব্যক্তি গ্রেফতার হলেও কাটছে না রহস্যের জট। যে অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছে তা নিয়েও তারপরের ডেভলেপমেন্ট নিয়ে দানা বেঁধেছে এক গুচ্ছ প্রশ্ন। ঘটনায় এক ব্যক্তি নাকি একাধিক ব্যক্তির যোগ রয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাপানউতোর। চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “প্রচণ্ড বল প্রয়োগ না করলে কলার বোন ভাঙাটা কখনও সম্ভব নয়। সাধারণভাবে টেনে দিয়ে বা মুচরে দিয়ে হাড় ভাঙা প্রায় অসম্ভব। যদি না তার উপর প্রচণ্ড বল প্রয়োগ করা সম্ভব না হয়। কিন্তু একজন যদি এটা করে থাকেন তাকে কিন্তু যথেষ্ট সুস্থ ও সবল মানুষ হতে হবে। আর এ ঘটনা ঘটানোর পরে তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন থাকবে না এটা হতে পারে না। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ধৃত নাকি নেশাগ্রস্ত মানুষ। বিকারগ্রস্ত মানুষ। তাহলে অসুস্থ মানুষের পক্ষে একটা ৩১ বছরের মেয়ের উপর এত আঘাত করা কী সম্ভব? সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়।”
একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলছেন হাসপাতালের ভূমিকা নিয়েও। প্রশ্ন দেহ পড়ানোর ক্ষেত্রে অতি সক্রিয়তা নিয়েও। কার্যত বিস্ময়ের সঙ্গে উৎপল বাবু বলেন, “প্রথমে বলা হল তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। তারপরে তাড়াতাড়ি বাবা-মাকে না জানিয়ে তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। তারপর ছাত্রদের চাপে কমিটি হল। এদিকে সেই কমিটি অবৈধ। এলাকায় তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। প্রথমদিনই আমাদের দাবি ছিল, উপযুক্ত ময়নাতদন্ত, কোর্ট মনিটরিং তদন্ত চাই। একইসঙ্গে যাঁরা আত্মহত্যার বিষয় বলে মোড় ঘোরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল সেটা নিয়েও তদন্ত করা উচিত।”
প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
একই মত চিকিৎসক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তাঁর দাবি, যা রিপোর্ট সামনে আসছে তাতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। তিনি বলছেন, “ওর বাড়িতে যে খবর দেওয়া হয়েছিল তা তো কর্তৃপক্ষ ছাড়া তো কেউ দিতে পারে না। দেওয়ার কথাও নয়। কারণ কর্তৃপক্ষের সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা। তাই সেখানে প্রশ্ন তো অবশ্যই আসবে। সেখানে কোনও সংশয় থাকতেই পারে না। কেন অসুস্থ বলা হল, তারপর কেন আত্মহত্যার কথা বলা হল এই প্রশ্নগুলির উত্তর তো খুঁজতে হবে তদন্তকারীদের। তদন্তের ভিতরে এগুলো আসার খুবই প্রয়োজন রয়েছে।” যে অবস্থায় তিলোত্তমার দেহ উদ্ধার হয়েছে, তারপরের যাবতীয় ঘটনাবলি নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তাঁর প্রশ্ন, একটা ইয়াং মেয়ে শুয়ে শুয়ে আত্মহত্যা করল কীভাবে? কোন ড্রাগ বা মেডিসিন নিয়ে থাকলে পিএম রিপোর্টে তো আসবে। সেগুলি তো কোনওটাই শোনা যাচ্ছে না।” ঘটনায় কী তবে একাধিক ব্যক্তির যোগ থাকতে পারে? সুশান্তবাবু বলছেন, “ঘটনা একজন ব্যক্তি করেছে নাকি সঙ্গে আরও কেউ ছিল এই প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে। কারণ যাকে ধরা হয়েছে সে মদ্যপ। তার পক্ষে এত কাজ করা একসঙ্গে সম্ভব নয়।”
পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। কেন শুরুতে আত্মহত্যা বলে দাগানো হল, কেন নাম প্রকাশ্যে আনা হল সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। বিস্ময়ের সঙ্গে বলছেন, “পুলিশ প্রথমেই ওনার নাম, বাড়ির ঠিকানা বলে দেওয়া হয়েছিল। তার মানে ধরেই নেওয়া হচ্ছে এটা হোমিসাইড নয়। এখন না হয় আমরা তিলোত্তমা বলছি। কিন্তু, প্রথনে তো আমরা জেনে গিয়েছিলাম কে উনি। পুলিশের তো একটা ফরেন্সিকের মিনিমাম সেন্স আছে!” এথানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “যিনি মারা গিয়েছেন তাঁকে উদ্ধারের সময় অবস্থা দেখে সেটা ক্রাইম সিন কি না সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আছে! সেখানে তাঁরা কীভাবে নাম বলে দিচ্ছেন? পুলিশের ভূমিকাটাই সন্দেহজনক। তদন্তকারী অফিসার কী করে সুইসাইডের কথা বললেন? ওনারা তো এই ধরনের বিষয়গুলিতে এক্সপার্ট! তাহলে তাঁর কী মিনিমাম সেন্স কাজ করল না? এতটা ইনসেনসিটিভ কী করে হতে পারেন?”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)