AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Partha Chatterjee: টাকার স্তূপ থেকে জেলমুক্তি, ফিরে দেখা পার্থর ৩ বছর সাড়ে ৩ মাস

Partha Chatterjee bail: গত কয়েকমাস ধরে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পার্থ। আজ (মঙ্গলবার) জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নাকতলার বাড়িতে যাওয়ার কথা তাঁর। নাকতলায় তাঁর বাড়ি ঘিরে সেই ভিড় আর নেই। পার্থর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, জেল থেকে ছাড়া পেলেও পার্থ আর তৃণমূলে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।

Partha Chatterjee: টাকার স্তূপ থেকে জেলমুক্তি, ফিরে দেখা পার্থর ৩ বছর সাড়ে ৩ মাস
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁদিকে), উদ্ধার হওয়া টাকা (ফাইল চিত্র)Image Credit: TV9 Bangla
| Updated on: Nov 11, 2025 | 7:14 AM
Share

কলকাতা: তখন তিনি রাজ্যের শাসকদলের মহাসচিব। আবার মন্ত্রী। দম ফেলবারও ফুরসত নেই। সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ৩ বছর সাড়ে ৩ মাস আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তৃণমূল তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছে। অবশেষে জামিন পেয়ে মঙ্গলবার নাকতলার বাড়িতে ফিরছেন পার্থ। এই পরিস্থিতিতে ফিরে দেখা যাক এই তিন বছর সাড়ে তিন মাস।

২০২২ সালের ২৩ জুলাই গ্রেফতার-

২১ জুলাই তৃণমূল শহিদ দিবস পালন করে। ২০২২ সালের ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসে যথারীতি ব্যস্ত ছিলেন পার্থ। তার পরদিনই কার্যত চমকে উঠল রাজ্যবাসী। পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হল। রাজ্যবাসী দেখল টাকার পাহাড়। প্রায় ৫০ কোটি নগদ টাকা ও গয়না উদ্ধার হল। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৩ জুলাই পার্থ ও অর্পিতাকে গ্রেফতার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ED)। গ্রেফতারের আগে পার্থকে টানা প্রায় ১৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সেদিন গ্রেফতারের পর ইডি পার্থকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান কি না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে পাননি। পরে পার্থ বলেছিলেন, “চেষ্টা করেছিলাম। পাইনি।” সেইসময় ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, “রেইড হলে প্রথমেই ফোন নিয়ে নেয়। তাহলে ফোন করবেন কীভাবে।”

দল থেকে সাসপেন্ড, সরানো হল মন্ত্রিসভা থেকে-

দলের মহাসচিবের ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে অস্বস্তিতে পড়ে দল। পার্থর গ্রেফতার পাঁচ দিনের মাথায় সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের সমস্ত পদ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরানো হল।” তৃণমূলের মুখপত্রেরও সম্পাদক ছিলেন পার্থ। সেই পদ থেকেও সরানো হয় তাঁকে। দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। দল থেকে সাসপেন্ডের পর মন্ত্রিত্বও যায় পার্থর। গ্রেফতারের ৬ দিনের মাথায় মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয় তাঁকে।

একের পর এক মামলায় নাম জড়ায় পার্থর-

ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। আর সেই গ্রেফতারির পরই একের পর এক মামলায় নাম জড়ায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর। গ্রুপসি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ মামলায় অভিযুক্ত হন তিনি। আবার ইডির পর সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করে।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনেকে জামিন পেলেও পার্থর জামিন হচ্ছিল না-

নিয়োগ মামলায় অনেকেই জামিন পেয়েছেন। এমনকি, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, পার্থর জামিন হচ্ছিল না। তা নিয়ে বারবার আদালতে প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবীরা। তাতে সিবিআইয়ের যুক্তি ছিল, নিয়োগ দুর্নীতির ‘মূল মাথা’ পার্থ। তিনি প্রভাবশালী। জেল থেকে বেরলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

জামিন পেলেও জেলমুক্তি আটকে যায় পার্থর-

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইডির মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলায় জামিন পেতে শুরু করেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। গত ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির শেষ মামলাতে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের একটি শর্তের জন্য জেল থেকে এতদিন বেরতে পারেননি পার্থ। গত ১৮ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জ গঠন করবে নিম্ন আদালত। তার পরে ২ মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করতে হবে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে পার্থকে জেল থেকে ছাড়া হবে। আট জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সোমবার(১০ নভেম্বর) শেষ হল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে। তারপরই পার্থকে জেল থেকে ছাড়ার নির্দেশ দেন বিচারক।

গত কয়েকমাস ধরে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন পার্থ। আজ (মঙ্গলবার) জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নাকতলার বাড়িতে যাওয়ার কথা তাঁর। নাকতলায় তাঁর বাড়ি ঘিরে সেই ভিড় আর নেই। পার্থর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন তাঁর জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, জেল থেকে ছাড়া পেলেও পার্থ আর তৃণমূলে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। তিন বছর সাড়ে তিন মাস পর জেল থেকে বেরিয়ে পার্থর জীবন কতটা আগের মতো হবে, সেটাই এখন দেখার।