Sheikh Shahjahan: বাম নেতা হয়ে উত্থান, ২০০৬ থেকে ২০২৪- নদী ঘেরা সন্দেশখালিতে কীভাবে হয়ে উঠলেন ‘সম্রাট’
Sheikh Shahjahan: দলেরই অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, শেখ শাহাজাহানের কাণ্ডে বিভিন্ন সময়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও দাপট কমেনি, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দাপট এতটাই বেশি ছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশও কাজ করত না কখনও কখনও।
কলকাতা: তিনি কোনও প্রথম সারির নেতা নন। মন্ত্রী বা বিধায়কও নন। গত ৫ জানুয়ারির আগে রাজ্য রাজনীতিতে যে তাঁর নাম নিয়ে খুব বেশি চর্চা হয়েছে, তাও নয়। অথচ সেই শাহজাহান খানের ইশারা না পেলে নাকি পাতাও নড়ত না সন্দেশখালিতে। উত্তর ২৪ পরগনায় নদী ঘেরা সন্দেশখালিতে তিনিই ছিলেন ‘নবাব’। ভেড়ি-জমি সবই নাকি তাঁর। বিগত প্রায় ২ মাস ধরে সামনে এসেছে তাঁর নানা কীর্তি। তবে এই শাহজাহানের উত্থান ঠিক কবে হল? ‘রঙ’ বদল করে কীভাবে দাপট ধরে রাখলেন তিনি?
তৃণমূলের দাপুটে নেতা হলেও, এ কথা সবারই জানা যে শেখ শাহজাহানের উত্থান হয়েছিল বাম আমলে। সেই সময় সরবেড়িয়া অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন শেখ মোসলেম। তাঁর দাপটও ছিল উল্লেখযোগ্য। সেই মোসলেমের সম্পর্কে ভাগ্নে শেখ শাহজাহান। ২০০৬ সাল থেকে মোসলেমের সহকারী হয়ে ওঠেন শাহজাহান। ধীরে ধীরে নাকি ভাগ্নের কাঁধেই এলাকার ইট ভাটা ও ভেড়ি থেকে তোলা আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোসলেম। তারপর দাপট একসময়ে এমন বাড়ে, যে মোসলেমকেও ছাপিয়ে যান শাহজাহান। ২০০৯ সালে বসিরহাট আসন হাতছাড়া হয় বামেদের। কিন্তু সরবেড়িয়া পঞ্চায়েত তখনও ছিল বামেদের হাতে। নেপথ্যে ছিলেন মোসলেম-শাহজাহান জুটি। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগও তুলেছিল সেই সময় বিরোধী আসনে থাকা তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দাপটের মধ্যেও সন্দেশখালি অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছিল বামেরা। সেটাও এই শাহজাহানের হাত ধরেই। পরে দাপট ধরে রাখতেই শাসক দলের দিকে ঝোঁকেন শাহজাহান।
২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ সন্দেশখালির ‘সম্রাটে’র। তাতেও সমান দাপট। তবে মোসলেম তখনও দলবদল করেননি। তাঁরও দাপট কিছু কম ছিল না। শুরু হয়ে যায় দ্বন্দ্ব। কয়েক বছর শাসক দল থেকে দূরে থাকলেও পরে ২০১৭ সালে তৃণমূলে যোগ দেন মোসলেম।জানা যায়, ২০১৫ সালে নাকি সন্দেশখালিতে সরকারি বাস রুট বন্ধ করে দেন শাহজাহান। বদলে ওই রুটো অটো চালাতে শুরু করেন তাঁর অনুগামীরা। সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও আসে বিষয়টি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বিজেপি কর্মী অপহরণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম ছিল শেখ শাহজাহানের। পুলিশকে মার খেতে হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।
দলেরই অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, শেখ শাহাজাহানের কাণ্ডে বিভিন্ন সময়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও দাপট কমেনি, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দাপট এতটাই বেশি ছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশও কাজ করত না কখনও কখনও। আমফানের পর মুখ্যমন্ত্রী সেখানকার ত্রাণের তালিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা যায়।
গত কয়েক দিনেই জানা গিয়েছে, এলাকার একাধিক মাছের ভেড়ি আর ইট ভাটা ছিল শেখ শাহজাহানের হাতে। সে সবের ব্যবসায় প্রচুর টাকার মালিক হয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। সেই টাকার একটা অংশ এলাকার দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন তিনি। তাতেই হয়ে উঠেছিলেন ‘মসিহা’। হয়ে উঠেছিলেন শাহাজাহান। তাঁর নির্দেশ ছাড়া নাকি এলাকায় মাছিও গলতে পারে না। পুলিশ-প্রশাসন কিংবা বিধায়ক, ওই এলাকায় ক্ষমতা ছিল না কারও। গত কয়েকদিনে কাপড়ে মুখ ঢেকে সে কথা জানিয়েছেন এলাকার অনেকেই।