
কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে ৩ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যেতে দেখা গিয়েছে। সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগের কথা নিজে শুনেছেন। এবার সাধারণ মানুষের কথা শুনতে গিয়ে অন্য মেজাজে দেখা গেল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে। কখনও মেলায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেলেন। আবার কখনও কীর্তনের তালে খোল-করতাল বাজালেন। এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাও বললেন রাজ্যপাল বোস।
সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে রাজ্যপালের ‘জলতরঙ্গ’ কর্মসূচি। ‘আমাদের গ্রাম আমাদের রাজ্যপাল’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে শুক্রবার বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। শুক্রবার সকালে রিভার ট্র্যাফিক গার্ডের জেটি থেকে লঞ্চে করে নাজিরগঞ্জ, সাঁকরাইল এবং বজবজ ঘুরে দেখলেন তিনি।
নাজিরগঞ্জে নেমে স্বামী প্রজ্ঞানন্দ সরস্বতী বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে স্থানীয় একটি মন্দিরে পুজো দিয়ে হুগলি কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা সারেন। আর এই নাজিরগঞ্জেই তাঁকে দেখা গেল একটা দোকান থেকে চপ ও ছোলা সেদ্ধ খেতে। আর চপ খোলা খেয়ে বাংলায় রাজ্যপাল বললেন, “খুব ভাল হয়েছে।” পাশের দোকান থেকে চা-ও খেলেন।
ফুচকা খাচ্ছেন রাজ্যপাল
নাজিরগঞ্জ থেকে এরপর লঞ্চ যায় সাঁকরাইলে। সেখানে জেটি ঘাট থেকে সাঁকরাইল গার্লস হাইস্কুলের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার ৫ কিলোমিটার রাস্তার মাঝেই লোকজনকে দেখতে পেয়ে নেমে যান রাজ্যপাল। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া চকোলেট দিয়ে সকলের সঙ্গে জনসংযোগ করেন। একটি জুটমিল বন্ধ থাকায় অনেকের কাজের অসুবিধা হচ্ছে বলেও রাজ্যপালকে কিছু স্থানীয় বাসিন্দা জানান বলে সূত্রের খবর।
শেষে সাঁকরাইল জমিদার মাঠে নেমে সাঁকরাইল স্কুলে যাওয়ার পথেই এক মহিলা বেরিয়ে আসেন প্রায় ভগ্নদশা একটি বাড়ি থেকে। হাতের সামনে খোদ রাজ্যপাল। প্রায় কেঁদে ফেলেন ওই মহিলা। রাজ্যপাল ওই মহিলাকে আশ্বস্ত করে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন। পরে পৌঁছন সাঁকরাইল গার্লস হাইস্কুলে। সেখানে ভারতীয় জাদুঘরের তরফ থেকে ‘the wonder’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেটির উদ্ধোধন করার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেন। পড়ুয়াদের মাঝে বক্তব্য পেশ করেন।
খোল বাজাচ্ছেন রাজ্যপাল
সেখান থেকে ফের লঞ্চ ঘাটে এসে রওনা দেন বজবজের দিকে। বজবজ ফেরিঘাটে নেমেই পাশের রাসমেলায় ঢুকে পড়েন রাজ্যপাল। আর ওই রাসমেলায় অন্য মুডে দেখা গেল রাজ্যপালকে। ফুচকা স্টল দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। খেলেন ফুচকা। রাজ্যপালের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে। তিনিও ফুচকা খান। মাস দেড়েক আগে দুর্গাপুজোর সময় পুজো প্যান্ডেলে মেয়েকে নিয়ে ফুচকা খেতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও ফুচকা খেতে দেখা যায়। এবার রাসমেলায় দাঁড়িয়ে ছেলেকে নিয়ে ফুচকা খেতে দেখা গেল রাজ্যপালকে।
করতাল বাজাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস
রাসমেলা থেকে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরে ফের ফেরিঘাটে এসে লঞ্চে চড়ে কলকাতার দিকে রওনা দেন রাজ্যপাল। ইজেডসিসি-র উদ্যোগে বিভিন্ন শিল্পীদের এনে লঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে কীর্তনের সময় খোল, করতাল বাজাতে দেখা গেল রাজ্যপালকে। অনেকে বলছেন, ‘জলতরঙ্গ’ কর্মসূচিতে রাজ্যপাল যেমন সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনেছেন, তেমন তাঁকে অন্য মুডেও দেখা গেল।