কলকাতা : বৃহস্পতিবার অম্বেদকরের জন্মজয়ন্তীতে বিধানসভায় শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়(Governor Jagdeep Dhankhar)। এদিন অম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন তিনি। কিন্তু তারপরই প্রকাশ্যে স্পিকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে দেখা গেল ধনখড়কে। আর গোটা ঘটনাটিই ঘটে সাংবাদিকদের সামনে। যা নিয়ে নতুন করে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায়। সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে তাঁকে সকলের সামনেই থামিয়ে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়(Speaker Biman Bandopadhyay)। স্পিকারের যুক্তি, এখানে কোনও প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়নি যে তিনি সাংবাদিকদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেবেন। স্পিকার বলেন, “আমি মাননীয় রাজ্যপালকে অনুরোধ করছি বিষয়টিকে সাংবাদিক বৈঠক করে দেবেন না।” সাংবাদিকদের উদ্দেশেও তাঁকে বলতে দেখা যায়, “দেখুন ভাই এটা প্রেস কনফারেন্স নয় যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”
যদিও হাসি মুখেই স্পিকারের ‘অনুরোধের’ পাল্টা প্রত্যুত্তর দিতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। সংবিধানের(Indian Constitution) রেশ টেনে বাক স্বাধীনতার কথা তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি। এরপরই রাজ্যপাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলে খানিক বিরক্তই দেখায় স্পিকারকে। এমনকি সরাসরি হাওড়া বিল নিয়ে রাজ্যপালকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তার সরাসরি উত্তর না দিয়ে বল ঠেলে দেন স্পিকারের কোর্টেই। তাতেই ক্যামেরার সামনে অস্বস্তিতে পড়ে যান বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে এই ঘটনা নিয়েই বিস্তর চাপানউতোর শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। এমনকি এদিনই আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধানসভার অচলাবস্থা নিয়েও সরব হতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। একইসঙ্গে স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধতার কথাও নতুন করে মনে করিয়ে দেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “আমি, মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার এমনকি বিধানসভার সমস্ত সদস্যরা সর্বদাই রাজ্যের উন্নতির জন্য, রাজ্যের মানুষের ভালর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের ভিন্ন ধ্যান-ধারণা থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য এক।” এদিকে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যাতে রীতিমতো চাপে পড়েছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে এই ইস্যুতে দফায় দফায় উত্তাল হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আদালত চত্বেরেই বড়সড় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সামিল হতে দেখা যায় তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের। এই প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। তিনি বলেন, “এইভাবে বিচারে বাধা দেওয়া যায় না। বিচার প্রার্থীদেরও বাধা দেওয়া যায় না। বিচারপতিরা ভয় পেলে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ হয়। হাইকোর্টে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাবেন না এটা হতে পারে না। সকলের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।” বর্তমানে রাজ্যপালের এই মন্তব্য নিয়েই জোরদার চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কবে রাজ্যপাল-স্পিকার এই ভাবে সংঘাতে(Governor-Speaker clash in Assembly) জড়িয়েছেন তা মনে করতে পারছেন না কেউই।