কলকাতা : স্কুল ছুটির পর নির্দিষ্ট স্কুল বাসে চেপেই বাড়ি ফেরে পড়ুয়ারা। কিন্তু শুক্রবার স্কুল ছুটির পর নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি ফেরে না পড়ুয়ারা। নির্দিষ্ট সময়ের পর বেশ কিছুটা সময় অতিক্রম করে যায়। কিন্তু তারপরও ছেলে-মেয়েরা বাড়ি না ফেরায় উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে অভিভাবক – অভিভাবিকাদের মনে। শুক্রনার ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। স্কুলে ছুটি হওয়ার পরেও গাড়িতে করে পড়ুয়ারা বাড়িতে না পৌঁছানো স্কুলের অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়তে থাকে। স্কুল কর্তৃপক্ষের থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকদের একাংশ। শেষে দুপুর প্রায় তিনটে নাগাদ বাড়ি ফেরেন পড়ুয়ারা। কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটল ? বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে শুক্রবার বিকেলে স্কুলে পৌঁছান সিআইডির গোয়েন্দারাও।
সল্টলেকের মহিষবাতান এলাকায় ওই বেসরকারি স্কুলটি হল মূলত মর্নিং স্কুল। ছুটি হয় বেলা ১১ টা ১৫ মিনিটে। দুপুর সাড়ে ১২ টার মধ্যে মোটামুটি সবাইকে নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু অনেক পড়ুয়াই কয়েক ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বাড়িতে না পৌঁছনোয় স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অভিভাবকদের অনেকেই। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনওরকম সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হলে দুশ্চিন্তা আরও বাড়তে থাকে। বাড়িতে না ফেরা ওই পড়ুয়াদের তালিকায় রয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের নিউটাউন ট্রাফিক গার্ডের এক কনস্টেবলের মেয়েও। মেয়ে বাড়ি না পৌঁছানোয় দুশ্চিন্তায় ডিউটি ছেড়ে স্কুলে আসেন তিনিও।
এদিকে ছেলে-মেয়েরা বাড়িতে না ফেরায় অভিভাবক – অভিভাবিকারা ছুটে আসে স্কুলে। ঘটনার জেরে স্কুল চত্বরের সামনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা এবং উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। খবর দেওয়া হয় সল্টলেকের ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তিনটি স্কুল বাস কোথায় উধাও হয়ে গেল? এমন প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই তুলতে শুরু করেন অভিভাবকরা। সমাপ্তি বসু নামে এক অভিভাবিকা জানিয়েছেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েদের ১১.১৫ মিনিটের মধ্যে ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা। এয়ারপোর্ট এক নম্বরে সন্তানকে নামানোর কথা। সেখানে এখনও (২. ৪০ মিনিট) পর্যন্ত সে ঢোকেনি। ক্লাস টিচারকে একাধিকবার ফোন করেও কোনও উত্তর পাইনি। স্কুল কর্তৃপক্ষের থেকেও কোনওরকম কিছু বলছে না।”
পরে জানা যায়, স্কুল বাসের বিভ্রাটের কারণেই সমস্যা। স্কুলের ছোটদের ক্লাস দীর্ঘদিন পর শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে। ফলে কোন পড়ুয়া, কোন বাসে বাড়ি ফিরবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ফলে অনেক পড়ুয়াই যে রুটের বাসে ওঠার কথা, সেই রুটের বাসে না উঠে অন্য বাসে উঠে পড়েছিল বলে দাবি স্কুলের। সেই কারণেই এই দেরি বলে জানানো হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। শেষে দুপুর প্রায় তিনটে নাগাদ ওই পড়ুয়ারা বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছেলে-মেয়েরা বাড়ি পৌঁছানোর খবর পেয়ে স্কুল চত্বর থেকে চলে যান অভিভাবক – অভিভাবিকারা।
উল্লেখ্য, এই স্কুলের তিনটি বাস ১১ টা ৩৫ মিনিট নাগাদ স্কুল থেকে বেরোয়। একটি বাস যাচ্ছিল কলকাতার দিকে, একটি যাচ্ছিল এয়ারপোর্টের দিকে এবং অন্যটি যাচ্ছিল নিউটাউনের দিকে। ছোট পড়ুয়ারা অনেকেই বাস রুটের কথা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পড়ুয়াদের নির্দিষ্ট বাসে তোলার দায় কি স্কুল কর্তৃপক্ষের নয়? এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। এদিকে অভিভাবক – অভিভাবিকাদের একাংশের অভিযোগ, পড়ুয়াদের যে বাসে পাঠানো হয়েছে, তাতে দেরি হচ্ছে, সেই বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের থেকে জানানো হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, এখন অনলাইন ক্লাসের দৌলতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। তাহলে কেন সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কিছু জানানো হল না?
আরও পড়ুন : Amit Shah: বিধানসভা ভোটের পর প্রথমবার বঙ্গ সফরে অমিত শাহ, বসতে পারেন বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে