কলকাতা: গড়িয়াহাটে (Gariahat Murder) হাড় হিম করা জোড়া খুনের তদন্তভার নিল লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা। নিহতদের একজন শিল্পসংস্থার কর্তা। অপরজন তাঁর গাড়ির চালক। গড়িয়াহাট থানার কাঁকুলিয়া রোডের ঘটনা দিনভর নিত্য নতুন মোড় নিয়েছে। এবার সেই ঘটনারই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার দুঁদে কর্তারা।
কলকাতা পুরসভার ৯০ নম্বর ওয়ার্ড। গড়িয়াহাট থানা এলাকার ৭৮ এ কাঁকুলিয়া রোড। সেখানকারই একটি বাড়িতে জোড়া দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। নিহতদের নাম সুবীর চাকি এবং রবীন মণ্ডল। সুবীর শিল্পসংস্থার কর্তা। রবীন ছিলেন তাঁরই গাড়ির চালক। বাড়ির দোতলার একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুবীর চাকির দেহ। তিন তলার ঘরে পাওয়া যায় তাঁর গাড়ির চালক রবীন মণ্ডলের দেহ। দু’জনের শরীরেই ধারাল অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পান তদন্তকারীরা।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সম্পত্তি বিক্রি ঘিরে এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কারণ, যেখানে এই ঘটনা সেই বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন সুবীর। বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিউটাউনে থাকতেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাড়ি বিক্রির পরিকল্পনার পর থেকেই একাধিক প্রমোটার এবং লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন সুবীর। বিভিন্ন সময়ে এই বাড়ি দেখানোর জন্য লোকও আনতেন। অবশ্য এলাকার লোকজন আবার দাবি করেছে, বাড়ি বিক্রি হবে শুনে থাকলেও বাড়ির মালিককে এখানে আসতে দেখেননি। চালকই আসতেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দা ভুলু হালদার। ভুলু বলেন, “ওনার ড্রাইভারই চাবি নিয়ে এসে লোককে বাড়ি দেখাতেন। দেখিয়ে চলে যেতেন।”
সুবীর চাকি তাঁর গাড়ির চালককে সঙ্গে নিয়ে রবিবার বিকেলে কাঁকুলিয়ার বাড়িতে যান। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বাড়িতে ঢোকার পর আর তিনি সেখান থেকে বের হননি। এদিকে তাঁকে কোনও ভাবেই ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না পরিবারের লোকজন। ফোনের সুইচ বন্ধ পেয়ে সোজা গড়িয়াহাট থানায় ফোন করেন। এরপরই পুলিশ এসে দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনা মনে করাচ্ছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেণী সংহার গল্পের কথা। মালিক ও চাকরকে যেখানে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
গড়িয়াহাটের তিন তলা এই বাড়ির এক তলায় ছিল বেসরকারি এক সংস্থার অফিস। কালচক্রে ঘটনার দিন রবিবার হওয়ায় অফিসটিও বন্ধ ছিল। সোমবার সেখানকার কর্মীরা এসে জানতে পারেন এই ঘটনা। বেসরকারি সংস্থার তরফে যিনি বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন সেই অরূপ বিশ্বাস জানান, সুবীরের মা ঊর্মিলা চাকির কাছ থেকেই এ বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। তাঁকে বলা হয়েছিল, বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তার পর ঘর ছাড়ার বিষয়ে কথা বলা হবে।
সেন্ট জেভিয়ার্স ও আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তনী সুবীর চাকি একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী। ছেলে থাকেন লন্ডনে। বিবাহিত মেয়ে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ইতিমধ্যেই জোড়া খুনের ঘটনায় ময়না তদন্তের যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে স্পষ্ট ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছিল সুবীর চাকি ও রবীন মণ্ডলকে। তদন্তকারীদের অনুমান, রবিবার সন্ধ্যায় খুন করা হয় দু’জনকে।
কাদের সঙ্গে বাড়িতে দেখা করতে এসেছিলেন সুবীর? আততায়ীরা কি জেনে বুঝেই উৎসবের শেষবেলাকে খুনের দিন হিসাবে বাছাই করেছিল? কাঁকুলিয়াকাণ্ডে দানা বাধছে এরকমই একাধিক প্রশ্ন। কারণ কাঁকুলিয়ার মতো পাড়াতে খুনের ঘটনা! যেখানে গায়ে গায়ে সব বাড়ি, সেখানে এমন কাণ্ড কেউ টেরটুকু পেলেন না। বহু প্রশ্নেরই জবাব হাতরাচ্ছেন সুবীর এবং রবীনের পরিবার।
আরও পড়ুন: Corona Update: ফের বাড়ছে সংক্রমণ, এবার এক লাফে অনেকটা বাড়ল পজিটিভিটি রেট