Hubba Shyamal: ‘পৈতে কাট’, ‘ফুটবল মাঠ’— খুনের নাম, সিনেমা আসার আগে চিনে নিন হুগলির ‘দাউদ’ হুব্বা শ্যামলকে
Hubba Shyamal: পুলিশ পচাগলা সেই দেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের মর্গে। খবর গেল কোন্নগর ২ ওয়ার্ডের ধর্মপুরে শ্যামল দাসের ঠিকানায়। পরিবারের লোকেরা এসে শনাক্ত করলেন, দেহটা হুব্বা শ্যামলেরই। হুগলির পুলিশ সুপার সে সময় তন্ময় রায় চৌধুরী। সাংবাদিকদের বললেন, "পরিবার জানিয়েছে দেহটি শ্যামল দাসের।
কলকাতা: রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হাত ধরে বড়পর্দায় আসছে হুগলির ‘হুব্বা’ শ্যামল দাস। জনমুখে যাঁর পরিচিতি ‘হুব্বা শ্যামল’ নামে। ব্রাত্য তাঁর ছবির নাম দিয়েছেন ‘হুব্বা’। হুব্বা এমন একটা শব্দ, যা অভিধানে নেই। মুখে মুখে ফেরা এই শব্দ হামবড়া হাবভাবের অধিকারীকে বোঝাতেই ব্যবহার হয়। সাধারণত ‘মোটা মাথা’র লোকজনের ক্ষেত্রে এ শব্দ মানানসই। তবে হুগলির শ্যামল দাস তেমনটা ছিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে।
বাম আমল তখন। হুব্বা শ্যামলের নামে নাকি বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। লোকে বলত হুব্বা শ্যামল নাকি ‘হুগলির দাউদ’। ড্রাগ পাচার থেকে খুন-রাহাজানি, প্রোমোটারি থেকে জমির দালালি, সবেতেই ‘ডন’ ছিলেন হুব্বা। এমনও শোনা যায়, ঠান্ডা মাথায় নৃশংসভাবে খুন করতে হুব্বা শ্যামলের দোসর ছিল না কেউ। শিউরে ওঠার মতো সেসব কথা। হুব্বা শ্যামলের হাত ধরেই সে সময় বাজারে চলত ‘পৈতে কাট’। ঠিক যেভাবে পৈতে পরে ব্রাহ্মণরা, বাঁ কাঁধ থেকে ডানদিকে কোমর পর্যন্ত, অভিযোগ সেভাবেই ছুরি চালাতেন হুব্বা শ্যামল। আরও ছিল, ‘ফুটবল মাঠ’, ‘বটি কাবাব’। সে নৃশংসতা অবর্ণনীয়।
ক্লাস থ্রি পাশ, ১০-১১ বছরে প্রথমবার নেশা, ছিনতাই করতে গিয়ে প্রথম খুনের অভিযোগে নাম জড়ানো হুব্বা শ্যামলের জীবন ছিল যেন নিষিদ্ধ পরোয়ানা। বাবা কারখানায় কাজ করতেন। সে কাজ চলে যাওয়ার পর শ্যামল নামে ফিল্ডে। ততদিনে বিপদকে আঙুলে নাচানোই হুব্বা শ্যামলের নেশা হয়ে উঠেছিল।
এমন ডাকাবুকো ছেলের নামের সঙ্গে কীভাবে জুড়ে গেল হুব্বা, তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। কেউ বলে, সারাদিন নেশা করে এমন হাবভাব করত তা থেকেই হুব্বা বলে ডাকতেন কাছের লোকজন। আবার কেউ কেউ বলে, আগুপিছু না ভেবে অপরাধের দিকে ধেয়ে যাওয়ার কারণেই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে যায় হুব্বা শব্দ। সে সময় রিষড়া, কোন্নগর কাঁপত হুব্বা শ্যামলের নামে। হুগলি পার করে হুব্বা শ্যামল ছড়িয়ে যান হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও।
২০০৮ সালে হুব্বা শ্যামলকে সল্টলেকের একটি মাল্টিপ্লেক্স থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথম গ্রেফতার হন সিআইডির হাতে। জামিনও পান। পরে আবারও গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। এহেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ হুব্বা শ্যামলের পরিণতি ছিল মর্মান্তিক। ২০১১ সালের জুন মাস। চারদিন ধরে খোঁজ নেই হুব্বার। পরিবার থানায় গেল নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে। সেদিন বৃহস্পতিবার। দুপুরে বৈদ্যবাটিতে গঙ্গা লাগোয়া খালে ভেসে এল একটা দেহ। গলার নলিকাটা, পেট লম্বালম্বিভাবে চেরা।
পুলিশ পচাগলা সেই দেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেল শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের মর্গে। খবর গেল কোন্নগর ২ ওয়ার্ডের ধর্মপুরে শ্যামল দাসের ঠিকানায়। পরিবারের লোকেরা এসে শনাক্ত করলেন, দেহটা হুব্বা শ্যামলেরই। হুগলির পুলিশ সুপার সে সময় তন্ময় রায় চৌধুরী। সাংবাদিকদের বললেন, “পরিবার জানিয়েছে দেহটি শ্যামল দাসের। পুলিশের খাতায় শ্যামল দাস একজন দুষ্কৃতী। খুন থেকে তোলাবাজি নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর নামে।” সেই হুব্বা শ্যামল এতগুলো বছর পর আবার ফিরছে পরিচালক ব্রাত্য বসুর হাত ধরে। হুব্বার চরিত্রে বাংলাদেশের সুপারস্টার মোশাররফ করিম। ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে সেই ছবি।