
একটা বছর কেটে গেল! সামনেই মহারণ। বঙ্গ এখন তপ্ত এসআইআর নিয়ে। শাসক-বিরোধীর আকচাআকচিতে তপ্ত হয়েছে পাড়ার চায়ের দোকান। সংবাদপত্রের শিরোনামে ‘দুর্নীতি’ বদলে জায়গা নিয়ে ‘এসআইআর’ টপিক! ‘ওয়াকফ’ নিয়ে অবস্থান বদল, চাকরি বাতিলে শিক্ষকদের ক্লাসরুম ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসা, সবেতেই কালির ছিটে লেগেছে। তবে এসআইআর- এই শাসকদলের কাছে কতটা ডিভিডেন্ট দেবে নাকি পিছনে তাড়া করবে সেই দুর্নীতি ইস্যু, তা বলা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু এ বছরে বেশ কয়েকটা খবর তৃণমূলের জন্য স্বস্তিরও বটে!
হেভিওয়েটদের জেলমুক্তি
২০২২ সালের ২২ জুলাই। সাতসকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সাড়ে ২৬ ঘণ্টা তল্লাশির পর গ্রেফতার করা হয়েছিল পার্থকে। ২০২৩ সালের ২৬ অগস্ট। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের জোড়া বাড়িতে সাতসকালেই তল্লাশি শুরু করে ইডি। প্রায় ২০ ঘণ্টা তল্লাশির পর গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। তাঁরা দুজনেই যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তাঁরা একাধিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাঁদের নাম জড়িয়েছিল পূর্বতন দফতরের দুর্নীতিতে। বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড় হয়। বিরোধীদের খোঁচা। নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা থেকে একাধিক একাধিক দাপুটে নেতা। গত কয়েকবছরে তাঁদের জামিনের আর্জি নিয়ে কম টানাপোড়েন হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালটা তৃণমূলের কাছে কিছুটা স্বস্তি। একে একে জামিন পেলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে জীবনকৃষ্ণ সাহাও। জানুয়ারি মাসে রেশন দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিন বছর তিন মাস পর গত নভেম্বর মাসে জামিন পান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আবার তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান। জামিনের পর বিধানসভাতেও যান পার্থ আর ময়দানে রয়েছেন বালুও! ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে তাঁদের দল কী দায়িত্ব দেয়, সেটা দেখার। তবে ‘মহারণে’র আগে এটা স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের কাছে স্বস্তির খবর।
৩২ হাজার চাকরি বহাল
২০১৬ সালের প্যানেল যখন পুরোটাই বাতিল করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত, তখন রাজ্য সরকারের গলার কাঁটা হয়ে ছিল আরও একটা মামলা। ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলা! চাকরি কি থাকবে না থাকবে না? এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল। রাস্তায় যখন ২০১৬ সালের ‘যোগ্যদের’ বিক্ষোভ-মিছিল, অনশন। তপ্ত হচ্ছে করুণাময়ী চত্বর। ৩২ হাজারের মামলার শুনানি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ দেয়, চাকরি বহাল থাকছে বত্রিশ হাজার শিক্ষকের। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, “যাঁরা ৯ বছর ধরে কাজ করছেন তাঁদের পরিবারের কথাও ভাবতে হবে। যাঁরা সফল হননি তাঁদের জন্য সব ড্যামেজ করা যায় না।” স্বাভাবিকভাবেই এই রায় রাজ্য সরকারের কাছে অনেকটা স্বস্তির ছিল। কারণ ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল নিয়ে কম খেসারত দিতে হয়নি রাজ্যকে। যার রেশ এখনও পর্যন্ত চলছে।
একশো দিনে ‘সুপ্রিম’ রায়
একশো দিনের কাজের বকেয়া! এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলের আন্দোলন, দিল্লির মাটি তপ্ত করেছে। গ্রামোন্নয়ন দফতরের সামনে দিল্লির সাংসদদের ধরনা-পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, আটক- সবেরই সাক্ষী থেকেছে বাংলা। সেই একশো দিনের কাজের মামলায় কেন্দ্রকে বকেয়া সমস্ত টাকা মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রায় চার বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে রাজ্যে ফের চালু হতে চলেছে কেন্দ্রীয় প্রকল্প—‘একশো দিনের কাজ’। এই মামলার আরও কিছু অমীমাংসিত অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য।
আদালত সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে ১০০ দিনের কাজ সংক্রান্ত একাধিক মামলা। সেই মামলাগুলির দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছে রাজ্য, বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে। আগামী ৭ নভেম্বর মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
মেয়াদ বৃদ্ধি
২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষকদের যাঁরা পুরনো চাকরিতে ফিরতে চাইছেন তাঁদের ফেরার মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানাল সরকার। আগামী বছরের ৩১ অগস্ট পর্যন্ত এই সময়সীমা বৃদ্ধি করা হল। সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ আট মাস বাড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাজারও ঝামেলা পেরিয়ে নতুন করে এসএসসি পরীক্ষা নিয়েছে রাজ্য। কিন্তু একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু করতেই দেরি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত সময় চেয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এসএসসি। যোগ্য চাকরিহারাদের চাকরির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্তই বেঁধে দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে সেই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তা গ্রাহ্য হয়।