
কলকাতা: ভিড় শুধু ভিড়! গত কয়েক বছরে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সঙ্গে ভিড়ের ছবিটা যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। পুজোর গ্ল্যামারে একটু যেন ফিকে হয়েছে লেবুতলা পার্ক নামটা। এবার তাঁদের থিম অপারেশন সিঁদুর। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, প্রজেকশন দেখতে ছুটে আসছে দূর-দূরান্তের অগণিত মানুষ। এই এক পুজোকে ঘিরে শহর দেখছে জনস্রোত। ভারতীয় সেনার বীরত্বের খতিয়ান দেখতে নামছে কাতারে কাতারে নামছে ঢল। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না এই নামের পেছনে লুকিয়ে আছে এক তরুণ বিপ্লবীর আত্মত্যাগ। জানেন কে ছিলেন সন্তোষ মিত্র? উত্তর খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায়।
কলকাতাতেই ব্রিটিশশাসিত ভারতে ১৯০০ সালের ১৫ অগস্ট জন্মেছিলেন সন্তোষ মিত্র। তবে তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে নানা মত। তবে এই তরুণ বিপ্লবী বেঁচেছিলেন মাত্র তিরিশটা বছর। তার মধ্যেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল নাম হিসাবে উঠে আসেন। আর ত্রাস হয়ে ওঠেন ইংরেজদের কাছে। তাঁর জন্মের পরেই মানে ওই বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঝড়টা যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। আর তার আঁতুরঘর তখন বাংলা।
ছোটবেলা থেকেই সন্তোষ মিত্রের ভিতর ছিল দেশকে স্বাধীন করার এক অদম্য আগুন। ১৯১৫ সালে কলকাতায় হিন্দু স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন এবং ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে ফার্স্ট ক্লাসে অনার্স নিয়ে পাশ করেন। পরে এম.এ. ও আইনও পাশ করেন।
যুবা বয়স থেকেই তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। রাতের অন্ধকারে গোপন বৈঠক, দেশ স্বাধীনর করার গুপ্ত ছক, অস্ত্র সংগ্রহ, নতুন ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করা—সবেতেই তিনি ছিলেন সক্রিয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকেও তুচ্ছ মনে করতেন তিনি। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ফলে কারাদণ্ড হয়। পরবর্তীতে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হন। তারই চেষ্টায় কলকাতায় জওহরলাল নেহ্রুর সভাপতিত্বে সোশ্যালিস্ট সম্মেলনও হয়েছিল। চট্টগ্রামে বিদ্রোহের সময় বিপ্লবীদের হাত শক্ত করতেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। গোপনে অস্ত্রও সরবরাহ করতেন। অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রাস্তায় চরমপন্থী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২৩ সালে শাঁখারিটোলা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হন। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হিজলি জেলে তারকেশ্বর সেনগুপ্তের সঙ্গেই সন্তোষ কুমার মিত্রকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।