কলকাতা: “আমার অভিজ্ঞতা বেড়েছে বলে আরও দায়িত্ব দেওয়া হল। সরিয়ে দেওয়া হয়নি।” কথাগুলি বলার সময়ে সেই একই আত্মবিশ্বাসের সুর অটুট সদ্য প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) গলায়। সঙ্গে সেই মেজাজও! মেঠো টানে আজও বললেন, ‘দায়িত্ব আমার বাড়ল।’ তিনি নবনিযুক্ত কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি।
মঙ্গলবারও তাঁকে নিউটাউনে অনান্য দিনের মতো প্রাতঃভ্রমণ করতে দেখা যায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের নয়া পদ নিয়ে তিনি বললেন, “আমার অভিজ্ঞতা বেড়েছে বলে আরও দায়িত্ব দিল দল। আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।” বিজেপি নতুন রাজ্য সভাপতি হিসাবে সুকান্ত মজুমদারের নাম যে তিনিই দলের কাছে সুপারিশ করেছিলেন, তা এদিন স্পষ্ট করে দেন তিনি।
দিলীপ ঘোষ বলেন, “কয়েক জনের নাম দিয়েছিলাম দলের কাছে। তাঁদের মধ্যে সুকান্ত একজন।” সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথম কলকাতার বাইরে নেতা বিজেপি রাজ্য সভাপতি হলেন। খুব ভালো বিষয় সেটা। উত্তরবঙ্গের জন্য ভালো হল।” উল্লেখ্য সুকান্ত মজুমদার আজই সকালে ট্রেনে কলকাতায় পৌঁছেছেন।
সুকান্ত মজুমদার প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওঁ বুদ্ধিমান শিক্ষিত ছেলে, ভাল কাজ করবে।” তবে বাংলার নিজের ভূমিকা প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট করে দেন, “আমি এখানে একজন সাংসদ। এক জন সাধারণ কর্মী হিসাবে কাজ করব। আমি কর্মক্ষেত্র পার্টি ঠিক করবে। আমার জীবন সাধারণ আছে। আমি পার্টির জন্য কাজ করি।”
বাবুলের তৃণমূল যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাবুল কেন, আমি এখনও বলছি, অনেকেই যাবেন। তবে তাতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।”
নতুন বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে সুকান্ত মজুমদারকে বেছে নিয়েছেন বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজনীতিতে সুকান্তর সফর খুব একটা দীর্ঘ নয়। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট আসন থেকে জয়লাভ করার পরই তাঁর প্রচারের আলোয় উঠে আসা। সেখান থেকে আজ রাজ্য বিজেপির প্রধান হলেন সুকান্ত।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের সিংহভাগই দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বকে মিস করবেন। প্রতিপক্ষ বিঁধবার ভঙ্গি, চাঁচাছোলা ভাষা, ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাজ, তাঁর মেজাজ-সবই কর্মীদের আকৃষ্ট করত। কীভাবে হাওয়া গরম করা সম্ভব, কীভাবে কর্মীদের মধ্যে উন্মাদনা টগবগ করে ফোটানো সম্ভব, সেই সবটাই এ কয়েকবছরে দেখেছে বাংলা। পদ্মশিবিরে তাঁর ‘ক্যারিশ্মা’ অস্বীকারের জায়গা নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরাই। যেভাবে গত কয়েক বছরে বিজেপি বাংলায় জায়গা করে নিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বাংলায় দলের উত্থানের সিংহভাগ ক্রেডিটই যায় দিলীপ ঘোষের ঘাড়েই। সেই তিনিই আজ বাংলায় ‘পদহীন’। তবে পদে না থেকেও তাঁর ক্যারিশ্মার ছাপ যে বাংলার সংগঠনে থাকবেই, তা মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।