কলকাতা: এখন আর জল নেই রাজভবনের (Raj Bhavan) সামনে। ভিজে রাস্তা। জল নেমে গিয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই। তবে এখন সেই এলাকাতেই পড়ে রয়েছে একটা নীল ছাতা। যাঁরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজভবনের সামনে ঋষভের নিথর দেহটা পড়ে থাকতে দেখেছেন, তাঁরা অবশ্যই চিনতে পারবেন সেই ছাতাটিকেও। এই ছাতা মাথাতেই যে দফতর থেকে বেরিয়েছিলেন বছর পঁচিশের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার। মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে শহর কলকাতার বুকে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক ঘটনা। রাজভবনের (Raj Bhavan) সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গিয়েছে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ঋষভ মণ্ডলের। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিভাগীয় তদন্ত ও এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, হুকিংয়ের জন্যই এই বিপত্তি ঘটেছে। বাতিস্তম্ভের আলো জ্বলছিল না, বিদ্যুৎ সংযোগও ছিল না। বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে ফের যান TV9 বাংলার প্রতিনিধি। গোটা বিষয়টি সরেজমিনে বর্ণনা করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনে। ঠিক তার উল্টো দিকেই পশ্চিমবঙ্গ রেজিস্ট্রি অফিস। এই দফতরের সামনের ফুটপাতেই পড়ে ছিল ঋষভের দেহ। পাশেই বাতিস্তম্ভের গা দিয়ে ঝুলছে কালো তার। মঙ্গলবার বৃষ্টির সময়ে এই তার জলে পড়ে ছিল। এদিন সন্ধ্যার বৃষ্টির জলবন্দি শহর কলকাতার ছবি করতে গিয়েই সাংবাদিকরা মর্মান্তিক এই ঘটনার মুখোমুখি হন। এই ফুটপাতের ওপর হাঁটু সমান জল ছিল। তার পড়ে ছিল জলে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, পাশেই একটি সরু গলি দিয়ে বেরিয়ে আসেন ঋষব। হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাথের গা ঘেঁষেই যাচ্ছিলেন। আচমকাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ঋষভ। মনে করা হচ্ছে, জলে পড়ে থাকা ওই তারেই তাঁর পা লেগে গিয়েছিল, আর তার জেরেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন তিনি।
তবে এই ঘটনা প্রথম নয়। শহর কলকাতার বুকে আমফানের সময়েও একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। জলে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে একাধিকজনের। ফিরহাদ হাকিম এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন, হুকিংয়ের জন্যই এই বিপত্তি ঘটেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে. সেখানে এক হকার বসতেন। তবে লকডাউনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে তিনি বসছেন না। সম্ভবত তিনিই হুকিংয়ের জন্য তার ব্যবহার করেছিলেন, পরে তা গুটিয়ে ওখানে একটি বাক্সের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন। যা ঝড়ে জলে পড়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পর সেই তার গুটিয়ে রেখে যান দমকল কর্মীরা।
আরও পড়ুন: চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজ্যের দৈনিক মৃত্যুর হার, জেলাতেও কোভিডের ভয়াবহ ছবি, কলকাতার পরই কোন জেলা এগিয়ে?
তবে এই ঘটনায় দায় এড়িয়ে গিয়েছেন সিইএসই কর্তৃপক্ষ। আমফানের সময়েও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তখন তারা দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলেছিল। পুর প্রশাসন ফিরহাদ হাকিম তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বারবার এ ধরনের ঘটনার পরও যে জলবন্দি শহর কলকাতার পরিস্থিতির যে পরিবর্তন হয়নি, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল ঋষভের মৃত্যু।