কলকাতা: মাদক কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজেপির হেভিওয়েট নেতা রাকেশ সিংয়ের (BJP Leader Rakesh Singh) বাড়িতে পুলিশ (Kolkata Police)। তবে রাকেশের বাড়িতে পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে সিআইএসএফ। প্রয়োজনে রাকেশ সিংয়ের বাড়ির দরজা ভাঙার জন্য হাতুড়ি, শাবল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে পুলিশ। তবে সেরকম কোনও পদক্ষেপ করতে হয়নি। আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ঢুুকতে পারে পুলিশ।
সোমবারই নিউ আলিপুরের মাদক কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেন গোয়েন্দারা। লালবাজারের তরফে জানানো হয়, এই মামলায় ফৌজদারি আইনের ১৬০ ধারায় তাঁকে সাক্ষী হিসাবে জিজ্ঞাসা করতে চান। এর ভিত্তিতে রাকেশ সিংয়ের কাছে নোটিস পাঠান লালবাজারের কর্তারা। আজই বিকাল চারটের মধ্যে লালবাজারে হাজিরা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাকেশ সিংকে। কিন্তু সকালে তিনি ইমেলে করে গোয়েন্দাদের জানান, মঙ্গলবার তিনি দিল্লিতে যাচ্ছেন। দু’দিন সেখানেই থাকবেন। তারপর তাঁর যেতে কোনও অসুবিধা নেই। এছাড়াও রাকেশ সিং লালবাজারের কর্তাদের কাছে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন।
রাকেশ গোয়েন্দাদের কাছে শর্ত রাখেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি যখন লালবাজারে যাবেন, তখন তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরাও তাঁর সঙ্গে থাকবেন। তাঁর সঙ্গে আইনজীবী থাকবেন বলেও শর্ত রাখেন রাকেশ। সেই মর্মে মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন রাকেশ।
লক্ষ্যণীয়ভাবে কাজের জন্য দিল্লি যাবেন বলে যে সময় লালবাজারে গেলেন না রাকেশ, সে সময় হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এদিন শুনানি চলাকালীন তাঁর আইনজীবী আদালতে তুলে ধরেন, রাকেশের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সওয়াল করেন, ২৬টি নয়, তার আগে থেকেই রাকেশের বিরুদ্ধে মোট ৫৬ টি মামলা চলছে। যার রায় বেরোলে রাকেশের ১০ বছর জেল হতে পারে। এমন এক ব্যক্তিকে কীভাবে কেবলমাত্র নোটিস পাঠানো যায়? কেন তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন না? সে সব প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের আইনজীবী।
এরপরই রাকেশের আর্জি খারিজ করে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী দত্ত। তাঁর পর্যবেক্ষণ, রাকেশকে এই তদন্তে সহযোগিতা করতেই হবে। এই নোটিসের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেননি বিচারপতি। আদালতের রায়ে মাদক কাণ্ডের মামলায় রাকেশের বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষেত্রে লালবাজারের পথে কোনও বাধা রইল না। এরপরই রাকেশের বাড়িতে সটান গিয়ে হাজির হন গোয়েন্দারা।
ড্রাগ কাণ্ডে বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামীর মুখে বারবার উঠে এসেছে বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাকেশ সিংয়ের নাম। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম যেদিন পামেলাকে আদালতে তোলা হয়, সেই সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বারবার রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছিলেন।
তাঁর দাবি ছিল, কৈলাস বিজয়বর্গীয় ঘনিষ্ঠ এই বিজেপি নেতাই ফাঁসিয়েছেন তাঁকে। গোটা ঘটনায় সিআইডি তদন্তও দাবি করেন পামেলা। বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ড্রাগ-সহ ধৃত আরেক বিজেপি নেতা প্রবীর কুমার দে-ও আদালতে ঢোকার সময় রাকেশ ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তোলে।
আরও পড়ুন: সওয়া এক ঘণ্টা! রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিষেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সিবিআই
যদিও রাজেশের বক্তব্য, “আমি নিশ্চিত, যে মেয়েটা ধরা পড়েছে। সে নিজে বলছে না, তাকে দিয়ে বলানো হচ্ছে। কাস্টডিতে ওকে দিয়ে বলিয়ে আমাকে দোষী করা হলে তো এটা রাজনীতি করা হচ্ছে।” গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “এই ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না। তদন্ত হচ্ছে।”