কলকাতা: অবশেষে কলকাতা পুরসভার ওয়েভার স্কিমে ইতি টানল প্রশাসন। গত বছর ১ অক্টোবর থেকে কলকাতা পুরসভা বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ে এই ওয়েভার স্কিম চালু করেছিল। ৩১ মে পর্যন্ত চলার পর এই ওয়েভার স্কিম শেষ হল। পুরসভার রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭ মাসে মোট ৫৩৫ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪২ হাজার ৬৫৬ টাকা আদায় করা গিয়েছে।
কলকাতা পুরসভার রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, করোনার মধ্যেও যেভাবে বকেয়া সম্পত্তি কর আদায় হয়েছে তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকরা অর্থ আদায়ের জন্য মাঠে ময়দানে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমারের কাছে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের শহরের ৮ টি ইউনিটই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
গত ১ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া এই ওয়েভার স্কিমে প্রথমদিকে সুদের উপর ১০০ শতাংশ ছাড় ছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ১০০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। পরে মার্চ মাস পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়। সুদের উপর এই ১০০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ৩১৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৭৩ টাকা বকেয়া কর আদায় হয়। এরপর এপ্রিল এবং মে মাসে সুদে ছাড়ের পরিমাণ ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়। এই ২ মাসে বকেয়া কর আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৬৯ টাকা। এগুলির পাশাপাশি সাসপেন্স খাতে বকেয়া কর জমা হয় ২১১ কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৯১৪ টাকা। সব মিলিয়ে বকেয়া কর জমা দিয়েছেন মোট ৭০ হাজার নাগরিক। যা নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত পুরসভার রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা। তাদের কথায়, গতবার ওয়েভার স্কিমে এত লোক অংশগ্রহণ করেনি। এ বার সংশ্লিষ্ট স্কিমে উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া মিলেছে।
এখানেই শেষ নয়, ওয়েভার স্কিম-সহ সম্পত্তি কর আদায়ের পরিমাণ প্রায় ১২০০ কোটিতে পৌঁছেছে। যা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নজিরবিহীন বলেই দাবি করছেন পুরকর্তারা। তাঁদের কথায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষের পকেটের অবস্থা একেবারেই ভালে ছিল না। অর্থনৈতিক অবস্থা করুণ হয়ে ওঠেছিল। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। এমন অবস্থাতেও ১ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে আদায়ের পরিমাণ, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত পুরকর্তারা।
আরও পড়ুন: তুঙ্গে সংঘাত, কেন্দ্রের শো-কজের জবাব দিতে চলেছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজস্ব কর বিভাগের এক কর্তা বলেন, “বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি না করা হলে বকেয়া করের ৫০ শতাংশ আদায় করা সম্ভব হত না।” মেয়র থাকাকালীন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যে যে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করলেই কর বকেয়া রাখা সম্পত্তির মালিকরা ছুটে আসবেন বলে দাবি ওই কর্তার। পুরসভার নিজস্ব তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে শহরে প্রায় ৭ লক্ষ করদাতা রয়েছেন। কিন্তু সংযুক্ত এলাকা এবং বন্দর এলাকার একাধিক বাড়ি বা জমির কর মূল্যায়নই আজ পর্যন্ত হয়নি। এমনকি, অনেক বাড়ি বা বহুতলের মিউটেশন বা অ্যাসেসমেন্ট না হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন সেখানে বাসিন্দারা বসবাস করছেন। এমন অনেক বহুতল বা বাড়ি রয়েছে, যার একটি অংশ বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, অথবা ব্যবহার করা হচ্ছে পুরসভাকে অন্ধকারে রেখেই। নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাবে সেই সম্পত্তিগুলির কর নির্ধারণও করতে পারেনি পুর প্রশাসন।
কর মূল্যায়ন বিভাগের এক শীর্ষকর্তার কথায়, এমনিতেই বকেয়া কর আদায়ে নানা সরলীকরণ করেও তেমনভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেননি শীর্ষকর্তারা। সরলীকরণে আখেরে পুর প্রশাসনের ক্ষতিই হয়েছে। পুরসভার এক শীর্ষ আমলার কথায়, দিনের পর দিন অনেক নাগরিকই কর জমা না দিয়ে আটকে রাখেন। মামলার জটিলতায় সেগুলি আদায় করাও যায় না। তা আদায়ের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা আজও তৈরি করা সম্ভবপর হয়নি। সে কারণেই বকেয়া সম্পত্তি করে সুদ ও জরিমানা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে আর চালানো যাচ্ছে না, ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে রাজ্যকে চিঠি দিল বাস মালিক সংগঠন