কলকাতা: সোমবার সকাল। নিউ মার্কেটের কাছে একটি বটগাছে চিলের তীব্র চিৎকার শুনতে পান স্থানীয়রা। সেটা ডেকেই চলছে। পথচারীরা লক্ষ্য করেন আসলে চিনা মাঞ্জা সুতোয় আটকে রয়েছে চিলটি। কোনওভাবে নিজেকে ছাড়াতে না পেরে আর্তনাদ করছে সে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছ থেকে এই খবর পেয়ে চিলকে উদ্ধার করতে মহানগরের রাস্তায় নামল কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা টিম। দীর্ঘক্ষণের প্রচেষ্টায় মুক্ত হল পাখিটি। উড়ে গেল আকাশে।
জানা গিয়েছে, এই চিনা মাঞ্জায় এই চিলটির আটকে থাকার ঘটনা পুলিশের কানে পৌঁছয় বন্য নামে একটু পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যের মাধ্যমে। ফোন করা হয়েছিল সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষকে। দীপ্তিময় বাবু নিজেও পশুপ্রেমী। তাই ব্যাপারটাকে একেবারেই লঘু করে দেখেননি তিনি। শুরু করেন সেই চিল উদ্ধারের উদ্যোগ।
দীপ্তিময়বাবু নিজের উদ্যোগে চেষ্টাচরিত্র করেও চিলটিকে উদ্ধার করতে পারেননি। কারণ গাছের উচ্চতা এতটাই যে সেখানে উঠে চিনা মাঞ্জায় ফেঁসে যাওয়া পাখিটিকে উদ্ধার করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অগত্যা খবর পাঠানো হয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা টিমকে। চিল উদ্ধারে ছুটে আসেন কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা টিমের কয়েকজন সদস্য ছুটে আসেন। আনানো হয় ল্যাডার। ততক্ষণে এই কর্মকাণ্ড দেখতে ভিড় জমে গিয়েছে। পথচলতি মানুষরা দাঁড়িয়ে পড়েন চিল উদ্ধার দেখতে। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা তাক করে অনেকে এই উদ্ধার দৃশ্যের ছবি তোলেন। বাহিনীর দুই কর্মী সেই ল্যাডারে উঠে মাঞ্জা সুতো থেকে উদ্ধার করে চিলটিকে।
নামিয়ে এনে চিলটির পরিচর্জা করে সেটিকে আবার ছেড়ে দেয় পুলিশ। আবার দুপুরের আকাশে উড়ে যায় চিলটি। পুলিশের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পশুপ্রেমীরা। দীপ্তিময়বাবুকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন বন্য নামে সেই পশুপ্রেমী সংগঠন।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে চিনা মাঞ্জা সুতোয় একের এক দুর্ঘটনা হয়েছে। গত ৩ মাসে শুধু মা ফ্লাইওভারের ওপর চিনা মাঞ্জায় জখম হয়েছেন ১২ জন বাইক আরোহী। কেউ মাঞ্জা সুতোয় জড়িয়ে পিছলে পড়েছেন, কারও নাক-মুখ কেটে রক্তারক্তি কাণ্ড হয়েছেয। যদিও এই দুর্ঘটনা এড়াতে ফ্লাইওভারের দু’দিকে ফেন্সিং দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেএমডিএ। সায়েন্স সিটি থেকে পার্ক সার্কাসমুখী লেনের বাঁদিক ঘেঁষে ফ্লাইওভারের ৯০০ মিটারের ধারে বেষ্টনী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শনিবারই মা উড়ালপুলে ব্যারিয়ার লাগানোর কাজ চলাকালীন চিনা মাঞ্জায় আহত হন খোদ কলকাতা পুলিশের এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। পূর্ব যাদবপুর ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট রূপম সাহার চিনা মাঞ্জায় গলায় জড়িয়ে যায়। তাঁকে উদ্ধারে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন পুলিশ কর্মীরা। তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: West Bengal BJP: পোলিং এজেন্টে ‘না’ বিজেপির, কয়েক দফা দাবি নিয়ে কমিশনে অর্জুনরা