কলকাতা: “আমরা তো আমাদের মেয়েকে ওঁদের দিয়েছিলাম, এত বড় বিপর্যয়ের পর তো অন্তত একবারের জন্য আমাদের চোখের জলটা মুছতে আসতে পারত, আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারত, জানাতে পারত আসলে কী ঘটেছে!…..” সাংবাদিকদের সামনে বসে কথা গুলো বলার সময়ে গলা ধরে আসছিল রসিকা জৈনের মা সঙ্গীতা জৈনের। পঞ্চাশোর্ধ্ব সেই মহিলাকে দেখে স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছিল কতটা বিধ্বস্ত তিনি। তাঁর এক পাশে বসে ছিলেন রসিকার বাবা। তিনি নির্বাক। তবে চোখের কোণা বেয়ে জল বেরিয়ে আসছিল তাঁরও। বারবার মুখ আড়াল করে নিয়েছেন তিনি। আলিপুরের ধনী শিল্পপতি পরিবারের গৃহবধূ রসিকা জৈনের (Rashika Jain Murder Case) মৃত্যুর পর এই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তুললেন রসিকার স্বামী কুশল আগরওয়ালের ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন।
রসিকার মা প্রশ্ন তোলেন, “কুশলের ফোন কেন আজকে বন্ধ রয়েছে? যদিও কিছু নাই করে থাকে, তাহলে কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছে? ঘটনার পর থেকে কেন কুশল একবারও যোগাযোগ করল না আমাদের সঙ্গে?” মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে অন্য গন্ধ পাচ্ছে তাঁর পরিবার। রসিকার মায়ের কথায়, ‘কিছু তো ব্যাপার আছে। তার জন্য ও (কুশল) আজ লুকিয়ে বেড়াচ্ছে।’
কলকাতার উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে তথা শিল্পপতি পরিবারের গৃহবধূ রসিকা জৈনের মৃত্যু রহস্য এখন খবরের শিরোনামে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আলিপুরে শ্বশুরবাড়ির নীচ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় রসিকার দেহ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয় বুধবার থেকে।
রসিকার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে আত্মহত্যাই করেছেন রসিকা। তবে তাঁর মৃত্যুর পেছনে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কোনও হাত রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪৯৮ ও ৩৯৬A ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনার দিন আলিপুরের ওই অভিজাত পরিবারে কী ঘটেছিল, তা জানতে সিসিটিভি ফুটেও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্রের খবর, রসিকা এক জন মনোবিদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। কাউন্সিলিংয়ের জন্য তিনি সেখানে যেতেন। তাঁর সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ।
১৬ ফেব্রুয়ারি জৈন পরিবারে ঠিক কী ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই পরিবারের সদস্যদের থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তাতে দেখা গিয়েছে, তিন তলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন রসিকা জৈন। কেউ যে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেয়নি, সেটি সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট। তবে রসিকার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁদের মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাতেন স্বামী কুশল।
উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে রসিকা জৈনের মৃত্যুর পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। মেধাবী ছাত্রী রসিকা কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে ডিগ্রি আনতে বিদেশে পাড়ি দেন। সেখান থেকে ফিরে পরিবারের দেখা পাত্র কুশল আগরওয়ালের সঙ্গে বিয়ে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: পুলিশের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ, ঘটনার দিন রসিকা জৈনের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল?
তাঁদের বিয়েতেও ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। রাজস্থানের উমেদ ভবনে বিয়ে হয় কুশল-রসিকার। উল্লেখ্য, এই ভবনেই মার্কিন পপ তারকা নিক জোনাসকে বিয়ে করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। কলকাতায় স্বামীর সঙ্গে প্রথম বছরটা ভালই কেটেছিল রসিকার। কিন্তু তাল কাটে প্রথম বছর বিবাহ বার্ষিকীর পরই। কুশল যে তাঁর ওপর অত্যাচার করতেন, তা নাকি বাবা-মা-ভাইকে একাধিকবার জানিয়েছিলেন রসিকা। কিন্তু সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে, তাঁরা বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তা যে হয়নি, তার প্রমাণ এখন হাতেনাতে।