সুজয় পাল: করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসকদের পরই তাঁরা। মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে একের পর এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে কলকাতা-রাজ্য পুলিস প্রশাসনকে। কখনও মাইক হাতে কবিতা, কখনওবা নচিকেতা কিংবা সুমনের গানের লিরিক্সে সচেতনার বার্তা প্রতিস্থাপন করে মানুষের কাছে তুলে ধরা। কখনও আবার উর্দি গায়েই রাস্তায় বসে আলপনা দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তুলিতেও উঠে এসেছে সেই একই বার্তা। দিনের পর দিন একেবারে রাস্তায় নেমে লড়াই চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রয়োজনে করেছেন কড়া পদক্ষেপও। এবার সেই পুলিসকেই সম্মান জানাতে রাজ্য সরকারের নয়া উদ্যোগ।
রাজ্য পুলিসকর্মীদের কাছে এবার পৌঁছল ভ্যাকসিন-বার্তা। ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র’ হিসাবে এবার পুলিসকর্মীরাও পেলেন রাজ্য সরকারের তরফে পাঠানো মেসেজ। শনিবার থেকেই কলকাতা ও রাজ্য পুলিসের কর্মীদের মোবাইলে রাজ্য সরকারের মেসেজ আসা শুরু করেছে।
মেসেজে লেখা রয়েছে, “COVID-19 এর মোকাবিলায় একজন কোভিড যোদ্ধা হিসেবে আপনি যেভাবে মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সেবা করেছেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনার কাছে COVID-19 এর vaccine যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। আপনি ও আপনার পরিবার সবসময় ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।” মেসেজের শেষে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
লালবাজার সূত্রে খবর, প্রায় দু’মাস ধরে পুলিসকর্মীদের সম্পর্কে সবরকম তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক পুলিসকর্মীর নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ সংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। তারপরই শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পুলিশকর্মীদের মেসেজ পাঠানো।
লালবাজারে কর্মরত এক সাব-ইন্সপেক্টর বলেন, “দিনকয়েক আগে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছি। এখনও রেস্টেই আছি। আজ সকালেই মোবাইলে দেখলাম রাজ্য সরকারের মেসেজ। ভাল লাগল। এখন অপেক্ষা করছি কবে ভ্যাকসিন পাব।” করোনা থেকে সেরে ওঠা অন্য এক অফিসার বলেন, “আমরা সামনের সারিতে কাজ করেছি মানুষের জন্য। বাইরে কাজ করে রোজ আমরা বাড়িতে গিয়েছি। এজন্য আমাদের পরিবারের লোকেদেরও ঝুঁকি নিতে হয়েছে। তাই সরকার যদি পরিবারের জন্যেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে তাহলে ভাল হয়।”
করোনা যুদ্ধে প্রথম সারিতে কাজ করা পুলিসকর্মীদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছিল লালবাজার। পুলিসকর্মীদের চিকিৎসা ও সবরকম সাহায্যের জন্য লালবাজারে তৈরি করা হয়েছে পৃথক ‘ওয়েলফেয়ার সেল’। যারা পুলিসকর্মীদের মাস্ক, স্যানিটাইজার বিলি করার পাশাপাশি তাদের যে কোনও রকম প্রয়োজনে পাশে থেকেছে। কোনও পুলিসকর্মী আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে। তাই ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা থাকবে ‘ওয়েলফেয়ার সেলের’।
আরও পড়ুন: কয়লা-কাণ্ডে সিবিআই দফতরে বাঁকুড়ার সার্কেল ইন্সপেক্টর
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, চিকিৎসক, পুলিসের পর দমকলকর্মী, পুরকর্মী-সহ প্রত্যেক প্রথম সারির যোদ্ধাদেরই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দীর্ঘ কয়েকমাসের লড়াইয়ের জন্যই তাঁদের সম্মান জানিয়ে এই কাজ করবে সরকার। ইতিমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কলকাতা ও রাজ্য পুলিসের অনেক কর্মী। পুলিসের মনোবল বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে লালবাজার। এবার মেসেজ পাঠিয়ে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে পাশে থাকার বার্তা দিল রাজ্য সরকার।