কলকাতা: ১৪ তলার অভিশপ্ত সেই লিফটের বাঁ কোণাটায় তখনও হয়তো চোখ পড়েনি গোয়েন্দাদের। ঝলসে দলা পাকিয়ে যাওয়া দেহগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর চোখ যায় সেখানে। পড়ে ছিল একটা আধ পোড়া মানিব্যাগ, একটা স্টিলের টিফিন বক্স। তাতে তখনও রাখা ছিল আধ খাওয়া রুটি আর তরকারির কিয়দাংশ। নিষ্প্রাণ এই পদার্থগুলিই শেষমেশ হয়ে উঠল রেলের সিনিয়র টেকনিশিয়ন সুদীপ দাসের পরিচায়ক। স্ট্র্যান্ড রোডের (Strand Road Fire) রাক্ষুসে আগুন তাঁকে এমনভাবেই গ্রাস করেছিল, যে তাঁকে দেখে চিনতে পারেননি তাঁর পরিবারের সদস্যরাই। শেষমেশ টিফিন বস্ক আর পোড়া মানিব্যাগ দেখেই শণাক্ত করা সম্ভব হয় তাঁকে।
রামরাজাতলার বাসিন্দা সুদীপবাবুর স্ত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করেন, ছেলে এমএসসি পড়ছে। সোমবার অনান্য দিনের মতো কাজে গিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বেলা ১০ পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। উৎকন্ঠা বাড়ছিল পরিবারে। এদিকে, স্ট্র্যান্ড রোডের আগুনে মৃত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনকে শণাক্ত করা সম্ভব হলেও, এক জনকে শণাক্ত করা যায়নি। ১৪ তলার লিফটের সামনে পড়ে থাকা যে ৫টি দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে ঝলসে যাওয়া দেহ ছিল সেটিই।
পরিবারকে দেখানো হয়েছিল, কিন্তু এতটাই বিকৃত ছিল অবস্থা, তা দেখে চিনতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। সূত্রে খুঁজতে থাকেন তদন্তকারীরা। এরপর ১৪ তলাতেই লিফটের পাশ থেকে উদ্ধার হয় একটি পোড়া মানিব্যাগ, টিফিট বাক্স। ফের তদন্তকারীদের তরফে সুদীপবাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, সেদিন টিফিনে কী এনেছিলেন সুদীপবাবু, তাঁর ব্যাগে কী কী ছিল!
আরও পড়ুন: আজই বাবা পুরুলিয়া ঘুরতে নিয়ে যেত, তাই এখনও অপেক্ষা করে বসে রয়েছে গিরীশের ৮ বছরের প্রিন্স!
উদ্ধার হওয়ায় টিফিট বক্সের ভিতর তখনও যে রাখা ছিল অর্ধেক রুটি। টিফিন বক্স আর মানিব্যাগ আর তার ভিতরে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখেই সুদীপবাবুকে চিহ্নিত করেন পরিবারের সদস্যরা। স্ট্র্যান্ড রোডের উদ্ধার হওয়া ৯টি দেহের মধ্যে সবচেয়ে ঝলসে যাওয়া দেহটি যে আসলে তাঁদেরই ঘরের লোকের, তা মেনে নিতে বাধ্য হয় সুদীপবাবুর পরিবারের সদস্যরা।