কলকাতা: ‘আমি তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না।’ এতদিন পর সৌমিত্র খাঁর (Soumitra Khan) বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিসের পাল্টা চিঠি দিলেন সুজাতা খাঁ মণ্ডল (Suajata Khan Mondal)। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট লিখলেন, দলবদলে কখনও ডিভোর্স হয় না।
২০ ডিসেম্বর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুজাতা। তার দু’ঘণ্টা বাদেই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন সৌমিত্র খাঁ। সেদিন বাংলা দেখেছিল কীভাবে রাজনীতির হাড়িকাঠে শেষ হয়ে যায় এক দাম্পত্য! এক সাংসদকে প্রকাশ্যে স্ত্রীর কথা বলতে কাঁদতে দেখেছিল গোটা বাংলা। তার ২৪ ঘণ্টা ব্যবধানেই স্ত্রী সুজাতাকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিস পাঠান তিনি। তারিখটা ছিল ২১ ডিসেম্বর। এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর স্বামীর নোটিসের পাল্টা চিঠি দিলেন সুজাতা।
তাঁর চিঠির প্রতিটি পরতে উঠে এলে আবারও নিতান্ত দাম্পত্যের আবেগ-অভিমান-অনুযোগের নানা কথা। সুজাতা প্রথমেই লিখলেন, “আমার হৃদয়টা হাজারো টুকরোয় ভেঙেছে। আমি যতটা না দুঃখ পেয়েছি, তার থেকেও অনেক বেশি স্তম্ভিত, কীভাবে তুমি আমাকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠাতে পারলে? তুমি নোটিসে যেসব কথা লিখেছ, তাতে মনে হচ্ছে এটা একটা মিউচ্যুয়াল ডিভোর্সের মামলা। কিন্তু আমি তো তোমায় ডিভোর্স দেওয়ার কথা কোনওদিনই বলিনি। আমি তো তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তুমি আমার সংসার, জীবন।”
চিঠিতে সুজাতা সৌমিত্রকে আশ্বস্ত করেন, “আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলি, আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি বলে এই দলের কেউ আমাকে তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না। তুমি বিজেপি করতেই পার।” নোটিসে সুজাতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন সৌমিত্র। তবে, সুজাতা পাল্টা চিঠিতে ভালবাসা, আবেগ, স্মৃতিমধুর দিনে কথা বারবার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কের শুরু থেকে, আর পাঁচটা সাধারণ দম্পতির কাটানো প্রত্যেকটি মুহূর্ত তুলে ধরতে চেয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেন, “আমি কি তোমাকে কখনও মনে করানোর চেষ্টা করেছি, তোমাকে বিয়ে করার জন্য বাড়ির সঙ্গে কতটা ঝামেলা করতে হয়েছিল আমায়?”
সুজাতা লিখেছেন, “তুমি আমাকে ঘরের লক্ষ্মী বলেছ, সকলের সামনে কাঁদলে। আর তার পরের দিনই ডিভোর্সের নোটিস পাঠালে। সেখানে আমার বিরুদ্ধে কী না কী অভিযোগ তুললে।” তাঁর কথায়, “আমাকে বলেছ আমি তোমাকে নিয়ে সন্দেহ করি। আমি নির্দয়, নিষ্ঠুর, ঝামেলা করি। আমি তোমাকে পরিবারের থেকে আলাদা থাকতে চাপ দিয়েছি- এই সব মিথ্যা অভিযোগ তুলে তুমি তোমায় সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছ সৌমিত্র। আমি তাতে স্তম্ভিত।”
তবে সৌমিত্র খাঁ তাঁর বিভিন্ন জিনিস আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ তোলেন সুজাতা। তিনি বলেন, “সল্টলেকের বাড়িতে আমার অনেক জিনিস রয়েছে। আমাদের বিয়ের অ্যালবাম, আমার কিছু মূল্যবান জিনিস ওই বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে। তুমি যে হেতু ওই বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছ, তাই আমি অনুরোধ করছি ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২ টা নাগাদ আমাকে একটিবার ঘরে ঢুকতে দিও। আমি আমার জিনিসগুলো নিয়ে চলে আসব।” দিল্লি ফ্ল্যাট থেকেও তিনি তাঁর জিনিস নিয়ে আসতে চান বলে চিঠিতে জানিয়েছেন সুজাতা। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপিই সৌমিত্র খাঁকে বাধ্য করে ডিভোর্সের নোটিস পাঠানোর জন্য
আরও পড়ুন: ‘কোনওদিনই তৃণমূলের সদস্য ছিলাম না’, বিজেপিতে যোগ দিয়ে বললেন রুদ্রনীল
চিঠির শেষে লিখলেন, “আমি তোমাকে আরও একবার বলছি সৌমিত্র, রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আমাদের সম্পর্ক, বন্ডিংটার কথা ভাব।” শেষে লিখলেন, ‘উইথ লাভ’। সুজাতা খাঁর এই চিঠিতে আরও একবার সামনে চলে এলে দাম্পত্যের এক্কেবারে ঘরোয়া কিছু কথা, যা কিনা রাজনীতির ‘বলি’। এখনও পর্যন্ত এই চিঠির প্রতিক্রিয়া সৌমিত্র খাঁয়ের থেকে পাওয়া যায়নি।