কলকাতা: রাতারাতি জরুরি তলব করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কারণ স্পষ্ট নয়! কেন অমিত শাহ (Amit Shah) নিজের বাসভবনে ডেকে পাঠালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) ? কেনই বা ডাকা হল না রাজ্যের অন্যান্য নেতাকে? একটি সূত্র বলছে, ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার সময় হাজির থাকার জন্য এই তলব। কিন্তু রাজ্যের সাম্প্রতিকতম কয়েকটি ইস্যু ও তার প্রেক্ষিতে কেবল এই বিষয়টি মেনে নিতে চাইছে না অপর সূত্র।
বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে আরও একটি বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাক নির্বাচন পর্ব থেকেই বঙ্গে বিজেপির মুখ হয়ে উঠেছেন শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচনে সেভাবে ভাল ফল করতে পারেনি দল। তবে শুভেন্দুর ওজন তাতে কমেনি। বরং রাজ্যের বিরোধী নেতা হিসাবে উঠে এসেছেন তিনি। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী মাপের বৈঠকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
ভোট পরবর্তী হিংসা, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি একাধিকবার সরব হয়েছেন। রাজ্যপালের সঙ্গেও করেছেন জরুরি বৈঠক। রাজ্যের একাধিক ইস্যু আর তার প্রেক্ষিতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার ক্ষেত্রে এখন তাঁর মুখই প্রধান হয়ে উঠছে গেরুয়া শিবিরে। কিন্তু তাতে দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। আশা অনুযায়ী ভোটে ভাল ফল না হওয়ায় শুভেন্দুকে দায়ি করেছেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ।
দলের একাংশ শুভেন্দু অধিকারীর ওপর অসন্তুষ্ট। কারণ চুরি, প্রতারণার মামলায় ইতিমধ্যেই নাম জড়িয়েছে তাঁর। তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কিন্তু যাঁকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী মুখ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে গেরুয়া শিবির, তাঁর গায়েই কালি লাগলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে আর সেটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ত্রিপল চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি গত কয়েকদিনে অস্বস্তি বাড়িয়েছে দুটি ফৌজদারি মামলা আর তার প্রেক্ষিতে উঠে আসা দুটি নাম- রাখাল বেরা ও চঞ্চল নন্দী। দুজনেই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে পুলিশ দাবি করছে। পুলিশের দাবি, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ এই দুজনের যুগলবন্দিই চাকরির নামে প্রতারণা চক্র চালিয়ে গিয়েছে কয়েক বছর। ভ্যানিশ লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রতারিত অসংখ্য। পূর্ব মেদিনীপুরের সূত্র ধরেই শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা। রাখাল বেরা আপাতত পুলিশি হেফাজতে আর রাডারে রয়েছেন চঞ্চল।
পুলিশ এখন কাটাছেঁড়া করা শুরু করছে। তাতে কি কেঁচো খুঁজতে কেউটে বেরোয় কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে দলেরই একাংশ। এরই মাঝে আচমকা শুভেন্দুকে দিল্লিতে তলবের পিছনে জল্পনা উঠতে শুরু করেছে, তবে কি বিরোধী দলনেতার পদ খোয়াতে চলেছেন শুভেন্দু? জল্পনা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: ‘মারব এখানে লাশ পরবে শ্মশানে…’, মহাগুরুর ডায়লগ-যন্ত্রণা এবার পৌঁছাল হাইকোর্টে
তবে অপর অংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসাই এই বৈঠকের অন্যতম ইস্যু। রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসার বিভিন্ন ঘটনা কী করে জাতীয় রাজনীতির স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া, শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি কী ভাবে দায়িত্ব পালন করবে, তা নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে পারেন শুভেন্দু।