কলকাতা: এই প্রথম নয়, এর আগেও কলকাতায় বন্ধ করে দেওয়া ছিল বিগ বাজেটের আরও একটি পুজো। দেশপ্রিয় পার্কের পুজো। সালটা ২০১৫। সেবার পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই শহর থেকে শহরতলি মুখ ঢেকেছিল বড় বড় ব্যানারে। এত্ত বড়! তারপরই প্রকাশ্যে আসে সেই চমক। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্গা নির্মাণ করে সক্কলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দেশপ্রিয় পার্ক। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। মন খারাপ হয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তাদের। আর এবার শ্রীভূমির তাঁদের সেই মন খারাপের স্মৃতি ফিরিয়ে দিল। কয়েকটা প্রশ্ন তুলছেন দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তারা। তবে কয়েকটা প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। কেন তাঁদের দৃষ্টান্ত দেখার পরও শ্রীভূমির পুজোয় ১৪০ ফুটেরও বেশি আলোকসজ্জা করা হল? কীভাবেই বা তার অনুমতি মিলল? কেনই বা এত পরে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করা হল পুজো মণ্ডপ?
২০১৫ সালে সবচেয়ে বড় প্রতিমা নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দেশপ্রিয়পার্ক। পুজোর উদ্বোধনের দিনই এত মানুষের ভিড় হয়েছিল, যে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা ছিল। পরবর্তীতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এই চিন্তা করেই হাইকোর্ট সেই পুজো বন্ধের নির্দেশ দেন। কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল প্রতিমা। গোটা প্রাঙ্গণ এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে বাইরে থেকেও কেউ সেই প্রতিমা দেখতে না পান। হাইকোর্টের নির্দেশে ম্লান হয়েছিল উদ্যোক্তাদের মুখ। মন ভেঙেছিল শিল্পীদেরও।
তারপর থেকে পুজোয় আর কোনও চমক রাখে না দেশপ্রিয় পার্ক। মণ্ডপ সজ্জা কিংবা আলোকসজ্জায় তেমন কোনও চমক থাকে না। এবারের পুজোও অত্যন্ত ছিমছাম। ২০১৫ সালের পর ২০২১ সাল। এবার বন্ধ করে দেওয়া হল শ্রীভূমির প্রতিমা দর্শন। মন খারাপ ফিরছে পুজো উদ্যোক্তাদের।
তবে দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বলেন, “আমদের প্রতিমা ৪০ ফুটের বেশি উঁচু ছিল। হাইকোর্ট তাতে নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু আমরা ভাবছি কীভাবে ১৪৫ ফুট কিংবা তারও বেশি উচ্চতার মণ্ডপ ও আলোকসজ্জা অনুমতি পেল? আর যদি অনুমতি পেয়েই গেল, তাহলে এত পরে কেন পুজো বন্ধ করা হল? আগে কেন করা হল না? আমাদের তো উদ্বোধনের দিনই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।” তাঁর আরও সংযোজন, “এই বছরটা একেবারেই অন্যরকম। এবারে নানা পদক্ষেপের আগে অনেক সংযত থাকা প্রয়োজন ছিল।”
অনেকের মধ্যেই এ বিষয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষো। দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তাদের তালিকায়ে নেই কোনও নেতা-মন্ত্রী নাম। আর সেই কারণেই উদ্বোধনের দিনই কোপ! তবে শ্রীভূমির পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু। তাই কি মিলল অনুমতি? আর তাই কি এত পরে বন্ধ পুজো?
সুজিত বসুর পুজো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলেরই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিআইপি রোড সংলগ্ন এই পুজোর লেজার আলোর কারণে বিমান উড়ান এর সমস্যা তৈরি হচ্ছিল । অভিযোগ জানায় বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ । এর পর আর ও একটি তথ্য সামনে আসায় ফের অস্বস্তিতে শ্রীভুমির পুজো । রাজ্য দমকল বিভাগের গাইড লাইনে পুজোর মণ্ডপের অনুমতির ক্ষেত্রে ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্যান্ডেল এর সর্বোচ্চ উচ্ছতা ৪০ ফুটের বেশি হবে না কখনই । প্রশ্ন উঠছে বুর্জ খলিফার উচ্চতা নিয়ে । কীভাবে নিজে এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা রাজ্যের দমকলমন্ত্রী হওয়ার পর ও তারই দফতরের নির্দেশিকা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুউচ্চ বুর্জ খলিফা তৈরি করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। এ প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রীর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।