কলকাতা: আজ দিল্লিতে শরদ পাওয়ারের (Sharad Pawar) বাড়িতে রাষ্ট্রমঞ্চের বৈঠক। এই বৈঠককে বিজেপি বিরোধী তৃতীয় বিকল্পের অঙ্কুর হিসাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। মঙ্গলবারের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ১৫ টি ছোটো-বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের। থাকছেন আম আদমি পার্টি, আরজেডির প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাতে লক্ষ্যণীয়ভাবে থাকছে না তৃণমূল (TMC)। আর তাতেই রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে! তবে কি এই বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি তৃণমূল? বিশ্লেষকরা বলছেন, অবশ্য অন্য কথা! একুশের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে আসা তৃণমূল আপাতত ব্যস্ত জল মাপতে।
তাহলে কি অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি বিকল্পের ভাবনায় প্রধান মুখ নিয়ে ইতিমধ্যেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রমঞ্চে? নেতৃত্বের প্রশ্নে আদৌ কি দানা বাঁধবে এই ফ্রন্ট? মূলত সোমবার শরদ পাওয়ারের বাড়িতে বৈঠকের পর ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের একটি মন্তব্য এই জল্পনাকে আরও জোরাল করেছে। প্রশান্ত দাবি করেছেন, কোনও তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টে তাঁর বিশ্বাস নেই। তার পর তো বিজেপিকে ঠেকাতে পারার প্রশ্ন। রাষ্ট্রমঞ্চের বৈঠকের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার সকালে জানা যায়, এই বৈঠকে থাকছে না তৃণমূলও। ভোটে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া যশবন্ত সিনহা থাকলেও, তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করছেন না বলেই খবর।
রাজনৈতিক মহলে এরপরই উত্থাপিত হয় দুটি প্রশ্ন। প্রথমত: তৃণমূল কংগ্রেসকে কি তাহলে এই বৈঠকে আমন্ত্রিত নয়? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে তার রাজনৈতিক তাৎপর্য আলাদা। দ্বিতীয়ত: আমন্ত্রণ পেয়েও তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিনিধি থাকছেন না এই বৈঠকে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কি অন্য পন্থায় বিশ্বাসী? জল্পনা তুঙ্গে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমন্ত্রণ না পাওয়ার বিষয়টি ধোপে টেকে না। কারণ একুশের নির্বাচনের পর দেশের রাজনীতির প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের যা অবস্থান, সেখানে কোনও কোনও আঞ্চলিক দলের ফোর্স তৈরি হচ্ছে, আর তাতে তারা আমন্ত্রিত নয়-সেটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
যদি এই বৈঠকটিকে জোট প্রক্রিয়ায় সলতে পাকানোর পর্যায় বলে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে তার ব্যপ্তিটা কত দূর এগিয়েছে, তা নিয়ে ভাববার রয়েছে। কেন মনে করা হচ্ছে এটা জোট প্রক্রিয়ার অঙ্কুরোদগম? কারণ ব্যাখ্যা করতে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে দেখা গিয়েছে মোদী বিরোধী কোনও জোট তৈরি করতে গিয়ে এত দেরি হয়ে গিয়েছে, যে সেটা কোনও দানা বাঁধে নি। নেতৃত্বের প্রশ্নে বিরোধ না হলেও সহমত হওয়া যায় নি। কোন কোন রাজ্যে, কোন দলকে কত আসন ছাড়া হবে- এসব নিয়েই একটা বিস্তর পরিকল্পনার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ২০২৪ এর নির্বাচনকে লক্ষ্য করে দু’বছর আগেই তার ঘুঁটি সাজানো শুরু করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। এর সঙ্গে উল্লেখ্য, তৃণমূল এখন গোটা বিষয়টির জল মাপতে পারে। আদৌ এই জোটে কারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তা দেখে নিতে চাইছে তৃণমূল।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মোদী বিরোধী ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। প্রেক্ষাপটটা সেসময় কিছুটা আলাদা ছিল। উত্তরপ্রদেশে উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছিল গেরুয়াবাহিনী। অন্ধ্র ইস্যুতে তখন বেড়ে গিয়েছিল বিজেপির ধুকপুকানিও। কারণ সে সময় এনডিএ সঙ্গ ত্যাগ করেছিল শরিক টিডিপি। এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে পেয়েছিলেন চন্দ্রশেখর রাও, চন্দ্রবাবু নাইডুকে। ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করতে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলে বিস্তর। অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি শক্তির সপক্ষে সওয়াল করেছিলেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
ফেডারেল ফ্রন্টের অনেকেই আগামীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আগামী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। ভোটের আগে থেকেই অনেকের জোট এবং আসন সমঝোতা হয়েছে। আঞ্চলিক দলগুলির অনেকে আবার ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছেন। তবে মমতার ফেডারেল ফ্রন্ট আর দানা বাঁধতে পারেনি। এখন পরিস্থিতি বদলেছে, জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থানও বদলেছে। ২৪ এর নির্বাচনের আগে যে আরও অনেক সমীকরণ রদবদল হবে, তা এখনই বলে দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সিংহভাগ অংশ।
আরও পড়ুন: প্রশান্তের ‘ফ্রন্ট-গুগলি’র মাঝেই বিরোধী বৈঠক ডাকলেন পাওয়ার! পাশে নেই তৃণমূল
এই ফ্রন্টকে অবশ্য বিশেষ আমল দিতে নারাজ বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাফ কথা, “এই সব নাটক আমরা অনেক দিন ধরেই দেখছি। এই ফ্রন্ট ওই ফ্রন্ট অনেক হচ্ছে। মোদীর ফ্রন্টই একমাত্র থাকবে। কংগ্রেস, সিপিএমও ধীরে ধীরে আঞ্চলিক দল হয়ে যাচ্ছে। বিজেপির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।”