
২০২৬-এর শুরুর দিকেই বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এদিকে, সদ্য শুরু হয়েছে বিশেষ নিবিড় পরিমার্জন। বাংলায় রাজনৈতিক চাপান-উতোর তুঙ্গে। এই পরিস্থিতির মধ্যে কাজের খতিয়ান প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই ভিডিয়োতে দেখানো হল উন্নয়নের খতিয়ান। পুরো খতিয়ানকে মমতা নাম দিলেন ‘উন্নয়নের পাঁচালি।’
২৪ কোটি দেশি বিদেশি পর্যটক এসেছে বাংলায় শুধু ২০২৫ এর অক্টোবরে। দেশের মধ্যে এখন দ্বিতীয়। হিন্দু মুসলিম শিখ ইশাই সব জাতি ধর্মের মানুষকে আমরা সম্মান করি তাই সব ধর্মের মানুষের জন্য আমরা কাজ করেছি। ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ পাট্টা দেওয়া হয়েছে।
দিঘায় জগন্নাথ মন্দির হয়েছে, শিলিগুড়িতে হয়েছে মহাকাল মন্দির। হরিচাঁদ ঠাকুরকে সম্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। সব উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গোটা রাজ্যেই অন্য়ান্য তীর্থক্ষেত্রগুলির উন্নয়নের খতিয়ানও তুলে ধরতে দেখা যায় মমতাকে।
রাজ্যে ৯ কোটি মানুষ খাদ্যসাথীর আওতায় রয়েছেন। ৭ কোটি ৪১ লক্ষ মানুষ দুয়ারে রেশন পাচ্ছে। এরইমধ্যে ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়েও কেন্দ্রের তুলোধনা করতে দেখা যায় মমতাকে। কেন হাস-মুরগির খাবারের দাম বাড়াচ্ছে কেন্দ্র সেই প্রশ্ন এদিন তুলতে দেখা যায় মমতাকে।
১৪ বছরে ৯৯ লক্ষ পরিবারকে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পানীয় জল প্রকল্পেও কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দিয়ে গঙ্গাসাগর সেতু তৈরি করেছি। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানেও অনেকটা কাজ করেছি।
ফের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সুর চড়াতে দেখা যায় মমতাকে। খানিক ক্ষোভের সঙ্গেই তিনি বলেন, রাস্তার টাকা বন্ধ করেছে কেন্দ্র। আমরা পথশ্রী প্রকল্পে ৬০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছি। ১ লক্ষ ৩০ হাজার গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করেছি। কিন্তু কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা পায় রাজ্য।
রাজ্যে ২ কোটি ২১ লক্ষ পরিবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছে। ১ কোটি ছাত্রীকে দেওয়া হচ্ছে কন্যাশ্রী। রূপশ্রীর আওতায় ২২ লক্ষ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ৬ গুণ বেড়েছে। ২ কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবারকে স্বাস্থ্যসাথী দেওয়া হচ্ছে। আবাস যোজনায় ৬৭ লক্ষ ৬৯ হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। মোট ১ কোটি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
১০০ দিনের কাজেও আমরা এক নম্বরে ছিলাম। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করায় কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছি। কর্মশ্রী প্রকল্পে ৭০ দিনের বেশি কাজ দেওয়া হয়েছে। ফিরে আসা ১ লক্ষ ৩১ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে সাহায্য করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র শিল্পে রাজ্যে ১ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান। মহিলা পরিচালিত ক্ষুদ্র শিল্প এ রাজ্য়েই দেশের মধ্যে সর্বাধিক। ১২ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালু করেছি। ২০১১ সালের তুলনায় কর আদায় বেড়েছে ৫.৩১ গুণ। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে ৯.১৬ গুণ। বাংলা এখন সারা দেশের মডেল।
২০২৩ সালের মধ্যে আমরা ১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে আমরা দারিদ্রসীমার উপরে তুলে এনেছি। ১৪ বছরে রাজ্যে ২ কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। সারা দেশে বেকারত্বের স্থান ৪০ শতাংশ কমিয়েছি। ৬টি অর্থনৈতিক করিডর হচ্ছে। এর মধ্যে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা হয়েছে।
২০১১ সালে বাংলার মা-মাটি-মানুষ যে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন, সেটা আজ প্রকাশ করা হল। ১৪ বছর ৬ মাস হল। আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
ইমনের গান শোনার পর তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করতে দেখা যায় মমতাকে। সঙ্গে থাকা শিল্পীদেরও উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হয়। পাশাপাশি মমতা এও জানান দ্রুত এই গান বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।
আগে আমাদের মা-ঠাকুমারা সন্ধ্যাবেলা বসে পাঁচালি গাইতেন। পাঁচালির মধ্যে দিয়ে মানুষের ঘরে যে ভাষা, মাটির ভাষা সেগুলি মানুষ শুনতে পেত, পছন্দ করতেন। এখন তো সেসব প্রায় উঠে গিয়েছে। গ্রামের দিকে এখনও হয়। তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানো, কেউ আজান করে, কেউ প্রণাম করে, কেউ চার্চে যায়। যে যার মতো করে। আগের দিনের সেই গৌরবকে গৌরবান্বিত করার জন্য পাঁচালি আকারে একটা ছন্দ বেঁধেছি। ইমন সেই গান পরিবেশন করবে।