কলকাতা: মাত্র সাড়ে বাইশ মিনিট! সাড়ে বাইশ মিনিটের সেই ফেসবুক লাইভে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আর কে এই কর্মকাণ্ডের মাথা? বরাবর বঙ্গ রাজনীতিতে ‘রঙিন’ বলে পরিচিত কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। তাঁর ফেসুবক লাইভে কার্যত অস্বস্তিতে তৃণমূল। লাইভে কখনও অভিষেককে খোঁচা, কখনও ‘ভাই’, কখনও কল্যাণে রুষ্ট, কখনও বা বন্ধু। কটাক্ষের হাত থেকে নিস্তার নেই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। বিধায়কের বয়ানবাজিতে কার্যত হতবাক ঘাসফুল। যদিও মদন তাঁর ফেসবুক লাইভে স্পষ্ট করেছেন নেত্রী একজনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফেসবুক লাইভে ঠিক কী কী বলেছেন কামারহাটির বিধায়ক ?
ভাইরাল হওয়া ওই লাইভে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল বিধায়ক আঙুল উঁচিয়ে বলছেন, “দেখুন আন্ডারএস্টিমেট করুন, কিন্তু এতটাও আন্ডারএস্টিমেট করবেন না। কারণ, আপনারা বলছেন দলের কথা দলেই জানাতে হবে। দলের বাইরে কোনও কথা বলা যাবে না! আপনারা বলবেন কোথায়, কখন যাব দলের অভিযোগ জানাতে? পার্টি তাড়িয়ে দিলে আমি মাথা নীচু করে মেনে নেব। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন চমকে-ধমকে সাইজ করে দেব, তাহলে মুশকিল রয়েছে! পার্টি মানে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ”
নিশানায় পার্থ ও অভিষেক
এরপরেই প্রসঙ্গ পালটে মদনের উক্তি, “কিছু চুটকি নেতা হঠাৎ আমি দেখছি বলছে, ‘এই জানিস আমি কে’ বলে নাচানাচি করছেন। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন…আমি বলছি মহাসচিব মহাশয়, আপনি বলছেন আপনি কেবল পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, মহাসচিবও…শৃঙ্খলারক্ষাল কমিটির সভাপতি, আপনি বলুন, কোথায় কখন শৃঙ্খলা রক্ষাল করতে হবে, কতটুকু করতে হবে। এটা তো অস্বীকার করার জায়গা নেই, অভিষেকের অফিসে গেলে অভিষেককে পাওয়া যায় না। অফিসের তলায় যাঁরা দায়িত্বে থাকেন তাঁদের পাওয়া যায়।”
‘অভিষেক আমার ভাই, কল্যাণ আমার বন্ধু’
এরপরেই ওই লাইভে বিধায়ক বলছেন, “শুনলাম কারা যেন কল্যাণের কুশপুতুল পুড়িয়েছে। কেন! কুশপুতুল পোড়াবে কেন! আরে কল্যাণের বাড়ি আরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি প্রায় পিঠোপিঠি।…ডেকে এনে মমতার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেই হল… ‘এই কল্যাণ তুমি কী করেছ!’ কল্যাণ আমার বন্ধু, অভিষেক আমার ভাই আর মমতা আমার নেত্রী। হিসেবে যেন কোনও ভুল না হয়। উই আর অন দ্য সেম বোট। দেখবেন। যা হবে তা একসঙ্গে হবে। দলের মাথা একটাই। নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, অভিষেক এত কম বয়সে এত ম্যাচুওর…দেখেও ভাল লাগে।”
তারপরেই একটু থেমে ফের বিধায়কের মন্তব্য, “আর অভিষেককে তৈরি করল কে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা না থাকলে কি আজকের অভিষেক অভিষেক হত! তারপরেও বলব, অভিষেক দলের অর্জুন। তাই, অভিষেক, ভাই তুমি ভাল করে কাজ করো। তোমার জয় হোক।”
এদিকে বিধায়কের এ হেন বয়ানবাজিতে হতবাক তৃণমূল। যদিও, মদন মিত্রের এই লাইভ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি কোনও তৃণমূল নেতা। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন মদন। বলেছিলেন, “কয়েকজন বুড়ো নেতা রাতারাতি খুব জ্ঞান দিচ্ছেন। এ সমস্ত নেতারা আন্দোলনে, মার খাওয়ার সময় ছিলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদি মনে করেন, এমন লোকদের তিনি দায়িত্ব দেবেন যাঁরা পার্টিটাকে মায়ের ভোগে পাঠিয়ে দেবে, দিতে পারেন, কারণ পার্টিটা তাঁর। তৃণমূলে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জিন টেস্ট করবে, ডিএনএ টেস্ট করবে, মদন মিত্র তা বরদাস্ত করবে না।” ফের মদনের লাইভ-বিতর্ক কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক শিবির।