Mamata Banerjee: উত্তরবঙ্গেও ‘ম্যানমেড’ বিপর্যয়! বাগডোগরা যাওয়ার পথে বিস্ফোরক মমতা
Mamata Banerjee Towards North Bengal: বিপর্যয়ের জেরে পাহাড়ের কোলেই আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। নিখোঁজ ডায়মন্ড হারবার। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধান চলছে। আর বাকিদের ধাপে ধাপে নামিয়ে সমতলে নামিয়ে আনার কাজ চলছে।

কলকাতা: বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। আর বাগডোগরা পৌঁছনোর আগেই উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়কে ‘ম্যানমেড’ বা ‘পরিকল্পিত বন্যা’ বলে দিলেন তিনি। বরাবরের মতোই আক্রমণ করলেন ডিভিসিকেও। গত শনিবার থেকে লাগাতর বৃষ্টি। যার জেরে রবির রাতে ভূমিধস। দার্জিলিং, মিরিক এবং কালিম্পঙে দেখা যায় ভয়াবহ ছবি। ভেঙে পড়ে রাস্তা। ফুঁসে ওঠে একাধিক নদী। দেখা যায় মৃত্যুমিছিলও।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘এখনও পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তরের বিপর্যয়ে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। ১৮ জন দার্জিলিঙে এবং ৫ জন মিরিকে।‘ বলে রাখা প্রয়োজন, এদিন উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগেই নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা ও স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে।
বৃষ্টি কমেছে, জলও বেশ কয়েক জায়গায় নেমেছে। তবে নদী এখনও উত্তাল। সোমে উত্তরবঙ্গে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন আবহবিদরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী এই বন্যাকে দাগিয়েছেন ‘পরিকল্পিত‘ বলে। তাঁর কথায়, ‘দেশের প্রায় সব জায়গায় অতিবৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল ম্যানমেড বা পরিকল্পিত বন্যায় মানুষ মারা গিয়েছে। ফরাক্কা বা হলদিয়া যদি সময় মতো ড্রেজিং করত কিংবা ডিভিসি, পাঞ্চেত, মাইথন পলি সরিয়ে দিত, তা হলে আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হত না।‘
ডিভিসিকে বিঁধে বরাবরই দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিকে ম্যানমেড বলে দাগিয়েছেন তিনি। এবার সেই একই তকমা শোনা গেল উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে। এদিন মমতা আরও বলেন, ‘ভুটান, সিকিমের জল নেমে পুরো বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। গঙ্গাতেও একই অবস্থা। পুরো জল থৈথৈ করছে। প্রসঙ্গ হচ্ছে কতটা জল সামলাব? বিহার, উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি হলে ফরাক্কা দিয়ে জল চলে আসছে আমাদের গঙ্গায়। এখানে গঙ্গা টুবুটুবু হয়ে যাচ্ছে। ডিভিসি তো ইচ্ছা মতো জল ছাড়ছে। নিজেদের বাঁচাচ্ছে। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাচ্ছে। আমিও চাই ঝাড়খণ্ড বাঁচুক।‘
তাঁর সংযোজন, ‘মাইথন, পাঞ্চেতে ঠিক মতো জল রাখার জায়গা নেই। তা হলে বাঁধ রাখার মানে কি? জলটা স্বাভাবিক নিয়মে আসত, স্বাভাবিক নিয়মেই বেরিয়ে যেত। গতকাল ভুটান সরকার আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা ওদের অনুরোধ করেছিলাম, ধীরে ধীরে জল ছাড়তে। এমনিতেই যা ছেড়েছিল তাতে নাগরাকাটা পুরো উড়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, মিরিক, ধূপগুড়ি, সব উড়ে গিয়েছে।‘
বিপর্যয়ের জেরে পাহাড়ের কোলেই আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। নিখোঁজ ডায়মন্ড হারবারের একজন। তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধান চলছে। আর বাকিদের ধাপে ধাপে সমতলে নামিয়ে আনার কাজ চলছে। গতকালও হয়েছে পর্যটক উদ্ধার। হবে সোমবারও।
মুখ্য়মন্ত্রীর কথায়, ‘৫০০ জন পর্যটককে আজ নামিয়ে আনা হচ্ছে। গতকালও বাসে চাপিয়ে বেশ কয়েকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। যে সকল পর্যটকরা এখনও আটকে, তারা যে সব হোটেলে রয়েছেন, তাদের থেকে টাকা নিতে বারণ করেছি। দরকার হলে সরকার টাকা দেবে।‘
পাশাপাশি তৈরি হয়েছে একটি কমিউনিটি কিচেন। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশের ডিজি। দুপুরের দিকে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব। প্রথমে তাঁরা হাসিমারাতে যাবেন। তারপর সেখান থেকে যাবেন নাগরাকাটায়। আগামিকাল যাবেন মিরিকে। অন্যদিকে সোমেই বানভাসী ধূপগুড়িতে পৌঁছেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব।
