কলকাতা : পরিবারে একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে করোনা। তাই পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে, প্রত্যেকেরই সতর্ক থাকা উচিৎ। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে সাধারণ মানুষকে এ কথা বোঝাতে গিয়ে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, তাঁর ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ভাই বাবুন যত্রতত্র ঘরে বেড়াচ্ছেন। আর সেটা তিনি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না।
এ দিন নবান্নে ছিল মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেই বৈঠকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যের মুখোমুখি হয়ে মমতা মানুষকে সতর্কবার্তা দেন। কী ভাবে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব, সে কথাই বোঝাচ্ছিলেন তিনি।
মানুষের অসতর্কতা বোঝাতে গিয়ে এ দিন তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে, বউয়ের করোনা হয়েছে, আর হাজব্যান্ড বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবছে আমি তো নেগেটিভ, আমি মিশতে পারি। বাড়িতে কারও হলে যে তারও আইসোলেশনে থাকা উচিৎ, সেটা আমরা ভুলে গেছি।’ এ কথা বলার পরই নিজের ভাইয়ের কথা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের বউয়ের কোভিড হয়েছে। কিন্তু বাবুন এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এটা একদম পছন্দ করি না। আমি খুব স্পষ্টভাষী। বলে দিয়েছি, কাল থেকে কারও সঙ্গে মিশবে না।’ তাঁর দাবি, পরিবারের সদস্য বলে কাউকেই ছাড় দেবেন না তিনি।
শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, তাঁর দুই গাড়ির চালক করোনা আক্রান্ত। তিনি যখন গঙ্গাসাগরে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে যিনি সবসময় ছিলেন, তিনিও করোনা আক্রান্ত। তবে মুখ্যমন্ত্রীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর নিয়ে যে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, সেই দাবি উড়িয়ে দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আমার আর মুখ্যসচিবের নাকি করোনা হয়েছে। আমার বাড়িতে ৫০০ ফোন এসেছে। হলে তো জানতে পারবেন! এটা তো লুকনোর বিষয় নয়। গোটা দেশ আক্রান্ত, গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। ‘
তবে প্রশাসনিক স্তরে যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এ কথা স্বীকার করেন মমতা। তিনি জানান, কলকাতার পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে পুরসভার সচিব প্রত্যেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয় সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও সাবধান হওয়ার কথা বলেন তিনি।
তবে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। এ দিনই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী অন্যদের কথা না শোনার জন্য পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। নিজের ভাইয়ের ক্ষেত্রে তাহলে তা কার্যকর হবে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলছেন, ভাই যত্র তত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করবে কেন মানুষ?’
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা সারা রাজ্যের মানুষকে মাস্ক পরা ও অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করার বার্তা দেন। প্রয়োজনে আরও কড়া কোভিড বিধি লাগু হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।