মঙ্গলবার ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযান। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করে জোরদার তৎপর কলকাতা পুলিশের। কলকাতা হাওড়ায় রীতিমতো চক্রব্যুহ। সাঁতরাগাছিতে চরম উত্তেজনা। ব্যারিকেড উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়। পাল্টা পদক্ষেপ পুলিশের।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়: আগামীকালের বনধ র সরকার বিরোধিতা করছে। রাজ্য সরকারেরে সিদ্ধান্ত আগামীকাল সবকিছু সচল রাখা হবে। সরকার সব ব্যবস্থা নেবে। কারও ক্ষতি হলে সরকার তা দেখবে । যানবাহন সচল থাকবে। বাংলাকে সর্বতভাবে সচল রাখতে হবে।
নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি হাওড়া ও কলকাতায়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে তৎপর পুলিশ। চলছে লাঠিপেটা। কাঁদানে গ্যাস। জলকামান। আহত দু’পক্ষই। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি হাওড়া ময়দান, হাওড়া স্টেশন চত্বরে। একদিকে যেমন পুলিশ লাঠিপেটা করছে। পাল্টা আবার তাঁদের আটকাতে ইট ছুড়ছে ক্ষিপ্ত জনতা। প্রত্যেকের এক দাবি ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ’। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিক বৈঠকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বুধবার বাংলায় ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকল বিজেপি। সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ছাত্রদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ।
হাওড়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নবান্ন অভিযানে ধরা পড়ল বেনজির ছবি। পুলিশকে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে মার আন্দোলনকারীদের। মারা হয় লাথিও। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ছবি।
দেখা গেল কয়েকজন আন্দোলনকারী নবান্নের নর্থ গেটের কাছাকাছি চলে আসে। জানা যাচ্ছে, তাঁরা নবান্ন চত্বরেই থাকেন। আন্দোলনকারীরা জাতীয় পতাকা হাতে চিৎকার করতে শুরু করেন। বলতে থাকেন ‘দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’। খানিকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। এরপর পুলিশ এসে তাঁদের সকলকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
বিস্তারিত পড়ুন: Nabanna Abhijan: ‘দাবি এক দফা এক মুখ্য়মন্ত্রীর পদত্যাগ’ বলতে বলতে হঠাৎই কয়েকজন চলে এলেন নবান্নের নর্থ গেটের সামনে, তারপর…
রণক্ষেত্র হাওড়া। দফায় দফায় জলকামান ছুড়ছে পুলিশ। জল কামান বন্ধ হতেই ফের জমায়েত করছেন আন্দোলনকারীরা। ভিড়ের মধ্যে থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট। ইটের আঘাতে এক পুলিশ কর্মীর মাথা ফেটে যায় বলে খবর। পাল্টা লাঠিচার্জ পুলিশের। ফাটানো হচ্ছে কাদানে গ্যাসের সেল।
হাওড়া ব্রিজে ব্যারিকেড ভাঙতেই রণক্ষেত্র পরিস্থিতি। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ছুড়ছে পুলিশ। পুলিশি বাধাতেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আন্দোলনকারীদের।
সাঁতরাগাছিতে উত্তেজনা। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হল প্ল্যাকার্ড, লাঠি।
কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়েছে মিছিল। জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলে আন্দোলনকারীরা। সাঁতরাগাছিতেও প্ল্যাকার্ড হাতে জমায়েত। কলকাতা থেকে হাওড়া, বেনজির চক্রব্যুহ পুলিশের।
নবান্নে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের দেখে হাতও নাড়ালেন। রীতিমতো দুর্গের চেহারা নিয়েছে নবান্ন।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকে নবান্ন অভিযান। আর তা নিয়ে রীতিমতো রণসজ্জায় কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মিছিল আটকাতে ২৫ জন উপ-নগরপালের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নবান্নের সামনে কড়া নিরাপত্তা, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। পুলিশের তরফ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, “যাঁরা আজকে মিছিলে আসছেন, তাঁদের পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে বলছি, শান্তিপূর্ণ এবং আইনসিদ্ধ আন্দোলনে আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না। তার সঙ্গে এটাও অনুরোধ করছি, আইন মেনে মিছিল করুন। রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন তার সংলগ্ন এলাকায় ১৬৩ ধারা লাগু থাকে। সেই ধারা অনুযায়ী সেখানে পাঁচজনের বেশি মানুষ জমায়েত করা আইনত নিষিদ্ধ। এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।”
নবান্ন অভিযানের আগের রাত থেকে খোঁজ মিলছে না চার জন আন্দোলনকারীর। নবান্ন অভিযানের আগে বড় অভিযোগ করলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। চার আন্দোলনকারীর গ্রেফতারির আশঙ্কা করেছেন তিনি। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তা পোস্টও করেছেন। শুভেন্দু জানিয়েছেন, চার আন্দোলনকারীর নাম শুভজিৎ ঘোষ, পুলকেশ পণ্ডিত, গৌতম সেনাপতি ও প্রীতম সরকার। হাওড়ায় স্বেচ্ছাসেবকদের ফুড প্যাকেট বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন চার জন। হঠাৎ করে তাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর। এমনকি ফোনেও তাঁর সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
কলকাতায় প্রতিবাদীদের মিছিল আটকাতে ২৫ জন উপ-নগরপাল পদমর্যাদার অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাওড়া সেতুর কলকাতার দিকের অংশ-সহ পাঁচ জায়গায় থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল। যার সঙ্গে থাকবে কাঠের সিজ়ার ব্যারিকেড।
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মসূচি। রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু অশান্তির আশঙ্কা করছে পুলিশ। অশান্তি এড়াতে মোতায়েন প্রায় ৬ হাজার পুলিশ। ১৯ টি জায়গায় ব্যারিকেড, প্রস্তুত জলকামান।
বিদ্যাসাগর সেতু এবং র্যাম্প, খিদিরপুর রোড, তারাতলা রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড, রিমাউন্ট রোড, কোল বার্থ রোড, কলকাতা বন্দরের সংযোগকারী ফিডার রোড-সহ একাধিক রাস্তায় রাত ১০টা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে জওহরলাল নেহরু রোড, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড, আউট্রাম রোড, খিদিরপুর রোড, লাভার্স লেন, ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউয়ের মতো রাস্তায়।
নবান্ন যেন দুর্গ! নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি। মোতায়েন প্রায় ৬ হাজার পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ কলকাতা-হাওড়ার একাধিক জায়গা।