AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Narayan Debnath Passes Away: প্রয়াত হাঁদা-ভোঁদা-বাঁটুল স্রষ্টা ‘পদ্মশ্রী’ নারায়ণ দেবনাথ

Narayan Debnath Passes Away: বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন ৯৭ পার করা শিল্পী-সাহিত্যিক।

Narayan Debnath Passes Away: প্রয়াত হাঁদা-ভোঁদা-বাঁটুল স্রষ্টা 'পদ্মশ্রী' নারায়ণ দেবনাথ
চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ। ফাইল চিত্র।
| Edited By: | Updated on: Jan 18, 2022 | 12:08 PM
Share

কলকাতা: প্রয়াত নারায়ণ দেবনাথ। বাংলা কমিকসের দুনিয়ায় ইন্দ্রপতন। প্রায় ২৫ দিনের লড়াই শেষ! মঙ্গলবার মিন্টো পার্কের একটি নার্সিংহোমে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন ৯৭ পার করা শিল্পী-সাহিত্যিক। হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টের স্রষ্টাকে সুস্থ করে তুলতে কোনও ত্রুটি রাখেননি চিকিৎসকরা। কিন্তু বয়সের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিলই। মঙ্গলবার আপামর বাঙালি হারাল তাদের প্রিয় বাঁটুল-স্রষ্টাকে।

শিবপুরের বাড়ির ছোট্ট ঘরটির টেবিল-চেয়ারে আজ ধুলো জমেছে। সমস্ত কাগজ পত্র ঢাকা পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে। পাশে শুকিয়ে যাওয়া রং তুলি, স্কেচ পেন। ঘরের বাঁ দিকে একটা সোফা, তার উপর শো কেসে নানান সম্মান। শো কেসের কাচেও ধুলোর পরত। গত ছয় দশক ধরে রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে লোকটি আপন মনে আঁকিবুকি কাটতেন ওই টেবিলে, কালির দোয়াতে চুবিয়ে নিতেন রং-তুলি, শো কেসের কাচ সরিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেন তাঁরই সৃষ্টিকে, বছর খানেক হল ওই চেয়ারের মালিক আর এসে বসেন না। একাকী চেয়ার টেবিল, অপেক্ষায় রং, তুলি আর স্কেচপেন, শো-কেসে থরে থরে সাজানো বইয়ের ফাঁকে বন্দিদশায় নন্টে ফন্টেরা! ওরা একদিন ভেবেছিল স্রষ্টার ছোঁয়ায় মুক্তি পাবে। আজ সবই অতীত। মালিকই সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন।

হাওড়ার শিবপুরের স্বর্ণকার পরিবারে জন্ম নারায়ণ দেবনাথের। ছেলেবেলা থেকেই বাড়িতে দেখেছেন বাবা-কাকাকে সোনার উপর নকশা ফুটিয়ে তুলতে। আপন মনে তাঁদের দেখাদেখি কাগজে তিনিও ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন গয়নার নানা নকশা। হয়ত তিনিও হতেন এক ভাল গয়নার কারিগর। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎই খেয়াল চাপে তিনি আঁকবেন। ভর্তি হয়ে গেলেন আর্ট কলেজে। কিন্তু পাঁচ বছরের ডিগ্রি কোর্সের শেষ বছরে খেয়ালবশত ছেড়ে দেন আঁকা শেখার ক্লাস। কাজ করতে শুরু করেন একটি প্রিন্টিং প্রেসে। আর সেখান থেকেই দেব সাহিত্য কুটিরের হাত ধরে প্রবেশ করেন বাংলার প্রকাশনা এবং কার্টুন জগতে। শুধু কি কার্টুন! অগুনতি বইয়ের প্রচ্ছদও বেরিয়েছে তার রং-তুলিতে।

পাঁচের দশকে শুকতারায় হাঁদা ভোঁদার নামে একটি কমিকস বেরোত অনিয়মিত ভাবে। সেই কমিকসে ‘ছবি ও কথা’র জায়গায় থাকত একটি বোলতার ছবি। ওই বোলতাটি আসলে তখনকার দিনের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিগনেচার। ১৯৬২ সালে দেব সাহিত্য কুটিরের উদ্যোগে নারায়ণবাবু হাঁদা ভোঁদাকে পরিমার্জন ও সংশোধন করে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। ২০১২ সালে ৫০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল হাঁদা ভোঁদার। নারায়ণবাবুর সময় থেকে হিসাব করলে হাঁদা ভোঁদার বর্তমান বয়স ৫৯ বছর। অন্যদিকে ১৯৬৫ সালে আত্মপ্রকাশ করা বাঁটুল ২০২১ সালে ৫৬ বছরে পা রেখেছে। নন্টে ফন্টেও ১৯৬৯ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরে পা রেখেছে ৫২ বছরে।

বড় ঘড়ির কাঁটায় সময় বয়ে চলে। আর একের পর এক রোমহর্ষক, দমফাটা হাসি, অবিশ্বাস্য কাণ্ডকারখানার রেখাচিত্র ফুটে উঠতে শুরু করে নারায়ণবাবুর কাজের টেবিল জুড়ে। তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। টিভি এসেছে, এসেছে নতুন নতুন চ্যানেল। মনোরঞ্জনের হাজারও সম্ভার এসে দখল করেছে শিশু মন। কিন্তু তাতে হাঁদা ভোঁদার দুষ্টুমি বা বাঁটুলের অতিমানবিক জনপ্রিয়তায় থাবা বসাতে পারেনি এতটুকুও। হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল ছাড়াও নারায়ণবাবুর তৈরি মুখ্য কমিক চরিত্রগুলি হল নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল, ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়, ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ, ডানপিঠে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, কৌশিক রায়, পেটুক মাস্টার বটুকলাল, শুটকি আর মুটকি।

একবার প্রকাশকের দাবি ছিল নতুন এক কার্টুনের। একদিন কলেজ স্ট্রিট থেকে ট্রামে করে ফেরার পথে হঠাৎই মনের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই পকেটের এক টুকরো কাগজে এঁকে ফেলা সরু পা, পাতলা কোমর আর বিশাল বুকের ছাতিওয়ালা এক অদ্ভুত দর্শন মজার চরিত্র। নাম হল তার বাঁটুল। ওই টেবিল আর চেয়ারে বসে দশকের পর দশক বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টেকে রাঙিয়ে গেছেন নারায়ণ দেবনাথ। গত বছর পাঁচেক ওই ঘর থেকে কয়েক পা হাঁটলেই পাশের একটা বড় ঘরে বিছানাবন্দি ছিলেন শিল্পী। শরীরকে বয়স কাবু করলেও মনের রঙে হাত লাগাতে পারেনি। কেউ দেখা করতে গেলে খুশি হতেন, মন ভাল থাকলে মেতে উঠতেন গপ্পে।

দীর্ঘদিন শিশুমনের পাশাপাশি বড়দের মন দখল করে থাকলেও, বাংলার সাহিত্য জগতের অনেকেই সাহিত্যিক হিসাবে তাকে মান্যতা দিতে চাননি। তাতে থোড়াই কেয়ার বাঁটুলের। হাঁদা ভোঁদারও তাতে এতটুকু মাথাব্যথা নেই। তারা তো একের পর এক দুষ্টুমিতে ব্যস্ত থেকেছে। সেই সরল দুষ্টুমির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি বাংলার তথাকথিত সাহিত্য বাজারও। দেরী হয়েছে, কিন্তু অস্বীকার করতে পারেনি। তাই ২০১৩-তে তাঁর ঝুলিতে আসে সাহিত্য অকাদেমির মতো পুরস্কার। এমনকী দেশের অন্যতম সেরা পুরস্কার পদ্মশ্রীও পান জীবনের শেষ প্রান্তে। এই তো সেদিন হাসপাতালের বিছানায় তাঁর হাতে পদ্মশ্রী সম্মান তুলে দেওয়া হয়।

শরীরের জরায় কলম থেমেছে বহু আগেই। এবার তাঁর মনও থেমে গেল। থেমে গেলেন তিনিও। পাঠক মনে হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুলের সেঞ্চুরি হলেও নারায়ণ দেবনাথ চলে গেলেন ৯৭ পার করে। তবে মানুষের মনে তিনি অপরাজিত। শিশু মন হোক কি পরিণত মন, সেখানে একের পর এক সেঞ্চুরি, ডবল সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থেকে যাবেন বাঙালির চিত্রকাহিনীর এই প্রাণপুরুষ।

নারায়ণ দেবনাথের শেষ সাক্ষাৎকারটি নিচে রইল পাঠকদের জন্য…

আরও পড়ুন: রেড রোডে কুচকাওয়াজে ‘বাতিল’ ট্যাবলো, প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুষ্ঠানেও কাটছাঁট, ঘোষণা নবান্নের