কলকাতা: তৃতীয়াতেই যে ভাবে শহরের পুজো মণ্ডপগুলিতে মানুষের ঢল দেখা গিয়েছে তাতে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগের ছবিটা আরও প্রকট হতে শুরু করেছে। সেই উদ্বেগে ঘি ঢালার কাজ করছে গত তিনদিনে বাংলার সংক্রমণের রেকর্ডটা। পর পর তিন দিন সাড়ে সাতশো পার করে গিয়েছে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা।
শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যে কোভিড বুলেটিন প্রকাশ করেছে, সেখানে একদিনে আক্রান্তের উল্লেখ রয়েছে ৭৮৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। কলকাতাতেই আক্রান্ত ১৫৮ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮ জন। এরপরই রয়েছে হাওড়ার নাম। একদিনে ৬৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন এই জেলায়। সুস্থতার হার ৯৮.৩২ শতাংশ।
বৃহস্পতিবারই একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৭১ জন। মৃত্যু হয় ১৩ জনের। বুধবার ৭৮৬ জন একদিনে করোনা আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ১৫ জনের। এই দু’দিনও সুস্থতার হার ৯৮.৩২ শতাংশ। অর্থাৎ সুস্থতার হার গত তিনদিনে ওঠানামা না করলেও সংক্রমণ, মৃত্যুর সংখ্যায় ফারাক এসেছে।
সবেমাত্র উৎসব শুরু হয়েছে। শনিবার চতুর্থী। কলকাতার বড় পুজোগুলি বাদ দিলে এখনও বহু প্যান্ডেলে প্রতিমাও এসে পৌঁছয়নি। তার মধ্যেও যে হারে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, তাতে সপ্তাহান্তের চতুর্থী-পঞ্চমী নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই। ইতিমধ্যে জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করার কথা বলেছে।
সিঁদুর-খেলা থেকে আরতি- সব উপাচারেই অনুমতি দিয়েছে আদালত। তবে সব ক্ষেত্রেই একটি শর্ত, টিকার ডবল ডোজ় নেওয়া থাকলেই মণ্ডপে অনুমতি মিলবে অঞ্জলি দেওয়ার কিংবা দশমীতে সিঁদুর খেলার। এবারও পুজোতে মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’ নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
অন্যদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দল বেঁধে সিঁদুরখেলা থেকে বিরত থাকাই ভাল। কোনও জামায়াত বা শোভাযাত্রা করা উচিত নয় এই সময়। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য সতর্ক করার পাশাপাশি বলা হয়েছে যাতে শিশু, বৃদ্ধ বা গর্ভবতী মহিলারা যতটা সম্ভব যেন ভিড় এড়িয়ে চলেন। পুজোর ব্যবস্থাপনায় যারা থাকবেন তাঁদের যেন টিকার দুটি ডোজ় নেওয়া হয়ে থাকে, সে কথা উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। বাজার, দোকান, রেস্তোরাঁয় শারীরিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
ইতিমধ্যেই শহরের বেশিরভাগ বড় পুজো কমিটিগুলিতে বিধি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। পুজোর সময়ে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি-বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়, তার জন্য প্রতিবারই বিশেষ ব্যবস্থা নেয় কলকাতা। এবারও তার অন্যথা হবে না। করোনাকালে আরও সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
গতবার উৎসবের মরসুম পার হতে না হতেই যে ভাবে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শহরের বুকে আছড়ে পড়েছিল! প্রিয়জন হারানোর সে শূন্যতার ঘা এখনও দগদগে বহু মনে। আর সে ছবিটা কেউ চাই না। সেই আতঙ্ক আর যেন আমাদের তাড়া না করে। রাজ্য সরকার থেকে স্বাস্থ্য দফতর কিংবা পুলিশ প্রশাসন — সকলেরই একটাই আর্জি উৎসবে মাতুন তবে পদচারণ হোক মাপা।
আরও পড়ুন: Covid Vaccine: পুজোর চারদিন কলকাতায় বন্ধ টিকাকরণ, জানাল পুরসভা