কলকাতা : নতুন করে ভয়ঙ্কর চেহারা সামনে আনছে করোনা। দেশ জুড়ে তৃতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেই পরিস্থিতির শুরুতেই বাংলায় কোভিড চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রকাশিত প্রোটোকলে কোভিডের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে মোলনুপিরাভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপিতে অনুমোদন দেওয়া হলেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল। বিতর্ক সামনে আসতেই মত বদলালেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা? নাকি এর পিছনে রয়েছে কেলেঙ্কারির গন্ধ?
রাজ্যের চিকিৎসা প্রোটোকলে এই দুই পদ্ধতি ছিল না। কিন্তু, কী ভাবে মোলনুপিরাভির বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের দেওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিশেষত উডল্যান্ডসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অ্যান্টিবডি থেরাপি দেওয়ার পরে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সেই বিতর্ক এড়াতেই প্রোটোকলে এই দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে মান্যতা দেওয়া হয় বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, এই চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকদিন আগে থেকে প্রয়োগ করা হচ্ছিল, সরকারি ক্ষেত্রেও এই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রোটোকল আকারে বের করতে একটু দেরি হল বলে জানান তিনি।
সরকারি প্রোটোকলে করোনার দু’টি চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি হওয়া মাত্র উষ্মা প্রকাশ করেন সরকারি নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী চিকিৎসক মহল। Tv9 বাংলাই প্রথম স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে চলা সেই বিতর্কের খবর প্রকাশ্যে আনে। এরপর সোমবার গভীর রাতে বিবৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, দুই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা এখনও প্রকাশ হয়নি। তাই মোলনুপিরাভির এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে কোভিড চিকিৎসা প্রোটোকল থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি পেয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ওরাল ড্রাগের ব্যবহারে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া। ঘটনাচক্রে, এর পরপরই ৩১ জানুযারি রাজ্যের প্রোটোকলে আইভারমেকটিন – ডক্সিসাইক্লিনের বদলে যোগ হয় মোলনুপিরাভির, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল। রাজ্যের প্রভাবশালী চিকিৎসক মহল বলছেন, বিতর্কের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে কেলেঙ্কারির বীজ।
১. স্বাস্থ্য দফতরের প্রোটোকলের লেখা রয়েছে, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ওমিক্রনে খুব একটা কার্যকর নয়। যা কার্যকর নয় তা কেন গাইডলাইনে?
২. মোলনুপিরাভির এখনও বাজারে আসেনি। যে ওষুধ বাজারে নেই তা কেন প্রোটোকলে?
৩. দেশের কোথাও এই দুই চিকিৎসা পদ্ধতিকে প্রোটোকলে যুক্ত করা হয়নি। আইসিএমআরেরও নির্দেশিকা নেই। হঠাৎ এক্ষেত্রে কেন এগিয়ে বাংলা?
৪. অ্যান্টিবডি ককটেলের খরচ লক্ষাধিক। স্বাস্থ্য দফতরের স্টোরে অ্যান্টিবডি ককটেল অমিল। মোলনুপিরাভির বাজারেই আসেনি। প্রোটোকল থেকে উধাও আইভারমেকটিন-ডক্সিসাইক্লিন। সরকারি পরিকাঠামোয় করোনা রোগীর চিকিৎসা হবে কী দিয়ে?
৫. অ্যান্টিবডি ককটেল দুটি ভিন্ন ওষুধের সংমিশ্রণ। প্রতিটি ১২০০ ভায়ালের হয়। রোগীকে দু’টি ভায়াল থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম করে অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়। প্রশ্ন হল, ৬০০ মিলিগ্রাম দেওয়ার পরে বাকি ৬০০ মিলিগ্রামের কী হবে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ৬০০+৬০০ মিলিগ্রাম পেলেও দু’টি ভায়াল মিলিয়ে রোগীকে অনেক ক্ষেত্রে মোট ২৪০০ মিলিগ্রামেরই দাম দিতে হচ্ছে। এরকম ব্যবস্থায় সরকারি শিলমোহর থাকবে কেন?
৬. প্রোটোকলে দু রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি কী ধরনের করোনা রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে, কোন বয়সের রোগীরা পাবেন, সংক্রমণের কতদিনের মাথায় পাবেন, তার উল্লেখ নেই কেন?
৭. অস্পষ্ট নির্দেশিকা কি বেসরকারি হাসপাতালকে মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার জন্য! উঠছে প্রশ্ন। প্রশস্ত হবে কালোবাজারির পথও। মত চিকিৎসকদের।