NRS: হাতে তিলোত্তমা হত্যার আগের একটি ভিডিয়ো, NRS-কে আট কোটি টাকার জরিমানার হুঁশিয়ারি
NRS: এনএমসি-র চিঠিতে উল্লেখ করা আছে, এনআরএসের ২০টি বিভাগের মধ্যে ১৮টি বিভাগে শিক্ষক চিকিৎসকদের হাজিরা ঘাটতি রয়েছে। এনআরএসে ডাক্তারদের গরহাজিরা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন।

কলকাতা: সামনে এসেছে তিলোত্তমা পর্বের আগের একটি ভিডিয়ো। একাধিক প্রশ্ন উঠেছে ডাক্তারি পড়াশোনার মান নিয়েও। এনআরএস (ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ) হাসপাতালকে আট কোটি টাকা জরিমানার হুঁশিয়ারি দিল এনএমসি। ডাক্তারি পড়াশোনার মান নিয়ে এনআরএস’কে শো-কজ করা হয়েছে এনএমসি’র। আট বিষয় উল্লেখ করে যথাযথ তার উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই উত্তর সন্তোষজনক না হলে, আট কোটি টাকার জরিমানারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এনএমসি-র চিঠিতে উল্লেখ করা আছে, এনআরএসের ২০টি বিভাগের মধ্যে ১৮টি বিভাগে শিক্ষক চিকিৎসকদের হাজিরা ঘাটতি রয়েছে। এনআরএসে ডাক্তারদের গরহাজিরা দেখে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। তিলোত্তমা কাণ্ডের আগে পরীক্ষার হলের ফুটেজ দেখেও উদ্বিগ্ন এনএমসি! পরীক্ষার হলে অবাধে টোকাটুকির অভিযোগ তুলেছে এনএসসি’রও! হাসপাতালে রোগী ভর্তির হারও সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা মোট আটটি বিষয়
১. মেডিক্যাল কলেজের ২০টি বিভাগের মধ্যে ১৮টি বিভাগেই শিক্ষক চিকিৎসকদের উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম।
২. ২০২৪ সালের ১ অগাস্টের একটি ভিডিয়ো সামনে এসেছে। ভিডিয়োটি ৮ নম্বর পরীক্ষা হলের। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষা চলাকালীন অবাধে হলে প্রবেশ করছেন অনেকে। পরীক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলে উত্তর লিখছেন। অর্থাৎ অবাধে টোকাটুকি চলছে। উল্লেখ্য, তিলোত্তমা পর্বে মেডিক্যাল কলেজগুলোর পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে পরীক্ষা হলে দুর্নীতি হয়, অভিযোগ উঠেছে তারও। এবার এনএমসি-র রিপোর্টেও যে তারিখের উল্লেখ রয়েছে, সেটি তিলোত্তমা পর্বের আগে। অর্থাৎ এই অভিযোগ আরও দৃঢ় হল।

৩. অ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেন্সিক মেডিসিন, ফিজিওলজিতে সিনিয়র রেসিডেন্ট শূন্যপদে উদ্বিগ্ন এনএমসি। এই বর্ষেও এখনও পর্যন্ত এই পদ খালি রয়েছে। যাঁরা পিজিটি পাশ করেছেন, তাঁদেরকও এখনও এই পদে যুক্ত করা হয়নি।
৪. হাসপাতালের মাত্র ৭৩ শতাংশ বেড ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ রোগী ভর্তির হার সন্তোষজনক নয়।
৫. মৃতদের তথ্য ঠিকমতো আপলোড করা হয়নি। যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে, তার মধ্যে মৃত্যু কত, তা আপলোড করা হচ্ছে না।
৬. বেড ব্যবহারের তথ্যও যথেষ্ট উল্লেখিত নয়।
৭. সাইটোপ্যাথোলজি অর্থাৎ প্যাথোলজি সংক্রান্ত তথ্য পরীক্ষার বিষয়েও তথ্যও সন্তোষজনক নয়।
৮. ক্যাডাভারস ডাটা অর্থাৎ হাসপাতালে মৃত্যুর পরিসংখ্যান, আর কত ওটি হচ্ছে, সে তথ্যও সঠিকভাবে উল্লেখিত নেই।
আট দফা নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এই আট দফায় ৮ কোটি টাকা জরিমানার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনএমসি। পত্রাঘাতে হাজিরা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করল এনএমসি। যদিও এই নিয়ে এনআরএসের সুপার ইন্দিরা দে, সাংবাদিকদের সামনে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে হাজিরা নিয়ে চিকিৎসকদের সতর্ক করে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক নেতা শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জরিমানা করছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন। সরকারি মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলোকে আগে পাত্তা দিত না, এবার একটু বেশিই জোরাজুরি হচ্ছে। তিলোত্তমার খুন ধর্ষণ নিয়ে যে প্রতিবাদ হয়েছিল, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছিল। প্রত্যেক পদক্ষেপেই জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আবার ফিরে এসেছে বীরূপাক্ষ, অভীকরা। আবার সক্রিয় উত্তরবঙ্গ লবি! তাহলে আর কী বলার থাকে! ”
এএইচএসডি চিকিৎসক নেতা মানস গুমটা বলেন, “জরিমানা হচ্ছে, তবে সেটা দিয়েই যদি পার পাওয়া যায়, আর আট কোটি আর কী! কিন্তু ছেলেমেয়েগুলোর পড়াশোনার নজর দেওয়ার ব্যাপারে কী বদল হবে!”
জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেছেন, “সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা হওয়ার কথা। যে কোনও মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা হলের একই অবস্থা! আন্দোলনের পর কিছুটা কমেছে।”

