কলকাতা: বিধায়কদের শপথ ঘিরে নতুন করে সামনে এসেছে রাজ্য ও রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাত। চার বিধায়কের শপথের ভার ডেপুটি স্পিকারের ওপর দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। যদিও পরে সেই জট কেটেছে, শপথ গ্রহণ করিয়েছেন অধ্যক্ষই। এ দিন বিধানসভায় সেই ইস্যু সামনে এনে রাজ্যপালের নাম না করে তোপ দাগলেন পরিষদীয় নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন পরিষদীয় কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
এ দিন বিধানসভায় পার্থ বলেন, ‘মহতি এই সভা বরাবর অধ্যক্ষই পরিচালনা করেন। কিন্তু, যে ভাবে বারবার আক্রমণ আসছে, বিধানসভার কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে, তাতে আমরা ব্যাথিত হয়েছি।’ পরবর্তীকালে বিধানসভার কাজে সহযোগিতা চান বলে উল্লেখ করেছেন পার্থ। তাঁর কথায়, ‘শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপে সত্যের জয় হয়েছে।’
রাজ্যপালের হাতে শপথ গ্রহণ করানোর ক্ষমতা থাকলেও সাধারণত, অধ্যক্ষকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ভবানীপুরের বিধায়ক হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ পাঠ নিয়ে ঠিক যেমন নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নতুন চার বিধায়কের শপথগ্রহণের আগেও সেই একই ছবি দেখা যায়। ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথ বাক্য পড়ানোর ভার দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
রাজভবনের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। অধ্যক্ষ থাকতে কেন উপাধ্যক্ষ শপথ পাঠ করাবেন, তা আদৌ দৃষ্টিনন্দন কি না বিভিন্ন কথাই ওঠে। এই নিয়ে রাজভবন ও বিধানসভার পরিষদীয় দফতরের মধ্যে চিঠিচাপাটিও চলে। পরে সোমবার শেষবেলায় এসে রাজভবন থেকে বার্তা আসে, চার বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাবেন অধ্যক্ষই।
সোমবার এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘পার্থবাবু রীতির কথা বলতে পারেন না। পার্থবাবুর রীতি একরকম হতে পারে, অন্য জায়গায় রীতি অন্যরকম হতে পারে। রীতির কথা বলে হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা যায় না।’ বিজেপি নেতার কথায়, শপথ বাক্য পাঠ করানোর অধিকার রাজ্যপালেরই হাতে। সেটা অস্বীকার করা যায় না। রীতি বদলাতেই পারে। তিনি বলেন, ‘অধিকার আসলে রাজ্যপালেরই হাতে। পূর্বতন কেউ করেনি বলে, তিনিও রীতি বদল করবেন না, এমনটা হতে পারে না। তাই সেটা মেনে নেওয়াই উচিৎ। মেনে নেওয়াটাই গণতন্ত্র, এটাই সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন।’
সূত্রের দাবি, পরিষদীয় দলের সঙ্গে আলোচনার পর নিজের অবস্থান থেকে সরেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সংবিধানে রয়েছে, মন্ত্রী, বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। সঙ্গে এ কথাও বলা আছে, রাজ্যপাল চাইলে বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর ক্ষমতা অন্য কারও হাতে (বিধানসভার অধ্যক্ষের হাতেই মূলত যা দেওয়া হয়) তিনি তুলে দিতে পারেন।
কিন্তু সোমবার রাজ্যপাল নির্দেশ দেন, উপাধ্যক্ষ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন চার বিধায়ককে শপথ পাঠ করাবেন। কিছুদিন আগেও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হতে শোনা গিয়েছিল অধ্যক্ষকে। এরপরই কানাঘুষো শোনা যায়, সেই দড়ি টানাটানি জিইয়ে রাখতেই রাজ্যপাল অধ্যক্ষকে বাদ দিয়ে উপাধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘ওরা যখন মর্জি তখন আসে, ওদের জন্য দুঃখ হয় না’, বিরোধী শূন্য বিধানসভায় ক্ষোভ মমতার