কলকাতা : ৩০০ টাকা দিতে হবে, তবেই নবজাতকের মুখ দেখতে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দিতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে বা অল্প টাকায় পরিষেবা পেতে সরকারি হাসতাপালে এলেও কার্যত কপর্দকশূন্য হতে হচ্ছে তাঁদের। শহরের সবকটি সরকারি হাসপাতালেই প্রায় একই ছবি। শতাব্দী প্রাচীন হাসপাতালের অন্দরেও চলছে তোলাবাজি। আরজি কর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল সর্বত্রই একই অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়টা জানা নেই, তা নয়। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। কোথাও স্ত্রী রোগ বিভাগে ভর্তি হতে তোলা দিতে হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এমনকি হাসপাতালের লিফটম্যানকে পর্যন্ত দিতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
শহর কলকাতার সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির স্ত্রীরোগ বিভাগে অবাধে তোলাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করছেন রোগীর পরিজনরা। এমার্জেন্সিতে ভর্তি করা থেকে রোগীর ওয়ার্ডে যাওয়া, সব ক্ষেত্রেই টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। নানা ছুতোয় রোগীর পরিজনদের টাকা দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে, নইলে জুটছে হুমকি। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, টাকা না দিলে ফেলে রাখা হচ্ছে রোগীকে। তোলাবাজি চলছে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক কায়দায়। হাসপাতালের মাইকে রোগীর পরিজনের নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। পরিজন ভাবছেন, রোগীর কোনও সমস্যা হয়েছে বলে ডাকা হচ্ছে। ওয়ার্ডে গিয়ে তাঁরা শুনছেন, তোলা চাই তোলা দাও।
আর জি কর হাসপাতালে পরিজনজের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, সেখানে হাসপাতালের এমার্জেন্সি গেট পেরতে গেলে ২০০ টাকা তোলা দিতে হয়। সদ্যোজাতর মুখ দেখতে চাইলে তোলা দিতে হয় ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর আইসিইউ-তে বেড পেতে হলে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও একই ছবি। অভিযোগ, সেখানে তোলাবাজিতে জড়িত খোদ স্বাস্থ্যকর্মী ও বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশ।
বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত তোলা দিতে হয়। এক একজন রোগীর জন্য, পরিবারকে অতিরিক্ত প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকাও দিতে হতে পারে।
নবজাতকের দর্শনের জন্য- ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা
সিজার রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা
ওয়ার্ডে যাতায়াতের জন্য ৫০ থেকে ১৫০ টাকা
পরীক্ষা- নিপিক্ষার জন্য় ৫০ থেকে ১০০ টাকা
আইসিইউ বেড পায়ার জন্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা
দারোয়ানকে দিতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হলে, তাঁদের দাবি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, সব জানা সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, উঠছে সেই প্রশ্ন।
আরও পড়ুন : Bhabanipur Murder: আততায়ী কি ওড়িশায় লুকিয়ে? ভবানীপুর খুনে অভিযুক্তকে ধরে দিতে পারলেই পুরস্কার