কলকাতা: গত বছরের শুরু থেকেই ভারতে করোভাইরাসের (Coronavirus) প্রকোপ দেখা দেয়। ভাইরাস সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে গত বছর পুজোয় (Durga Puja) পণ্ড হয় সব আয়োজন। উদ্যোক্তারা পুজোর সাজসজ্জায় খামতি না রাখলেও আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় কলকাতাবাসীর ‘ঠাকুর দেখা।’ বছর ঘুরে আবারও আসন্ন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। করোনার চোখ রাঙানি কমেনি এবারও। একদিনে সদ্য পেরনো দ্বিতীয় ঢেউয়ের (Second Wave) ভয়াবহ স্মৃতি আর অন্যদিকে কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের (Third Wave) আশঙ্কা। উৎসবের মরশুমে বিপদ বাড়বে না তো? সেই কথা মাথায় রেখেই আবারও জনস্বার্থ মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court)। গত বছরের মতো এবারও মণ্ডপ দর্শণ বন্ধ রাখার নির্দেশ বহাল রাখতে আবেদন জানানো হল আদালতে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেই এই জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। এই মহোৎসবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং করোনা বিধি মানার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলা রুজু হয়েছে। মামলাকারীর আবেদন, হাইকোর্ট গত বছর যে নির্দেশিকা জারি করেছিল সেটাই এ বছরও বলবৎ থাকুক। আইনজবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, গতবারে হাইকোর্টের নির্দেশে কারণেই করোনার সংক্রমণ অনেকটা ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল। গত বছর পূজা নিয়ে মামলা করেছিলেন অজয় দে। সেই মামলার পরিপ্রক্ষিতে আদালত নির্দেশ দেয়, সাধারণ মানুষ মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি, উদ্যোক্তার সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে বিপুল ভিড়ের ছবি দেখিয়েই সেই মামলা করা হয়েছিল।
কিছুদিন আগেই পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি মাসেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন মমতা। আর সেই ঘোষণার জেরেই মনে করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এ বছর একই রকম আড়ম্বরে পুজো করা হবে। তাই তড়িঘড়ি এই জনস্বার্থ মামলা বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। উল্লেখ্য, গত বছরও এই পুজোকমিটি গুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছিলেন মমতা। তার আগের বছর ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। পুজো কমিটিগুলির বৈঠকে অবশ্য করোনা বিধি জারি রাখার কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাবল্য কিছুটা কমলেও তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের (NIDM) তরফ থেকে এই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে প্রধামমন্ত্রীর দফতরে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অক্টোবরেই সম্ভবত চরম আকার ধারণ করতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ। শিশুদের ক্ষেত্রে যে এই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকবে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে ওই রিপোর্টে। একসঙ্গে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যায়. তার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকেও বলা হয়েছে যাতে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া হয়। আর এই অক্টোবরেই দুর্গা পূজা কলকাতায়। তাই পুজো আনন্দে এবারও ছেদ পড়তে পারে বলেই অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন: Sougata Roy: ‘কেন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল?’ দমদমে দুই বালিকার মৃত্যুতে সাংসদের মন্তব্যে বিতর্ক