কলকাতা : বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর প্রায় ৮-৯ মাস কেটে গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এখনও শাসক দলের ভয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি অনেকে। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় আদালতেও বারবার এ কথা জানিয়েছেন মামলকারীরা। তবে মামলকারীদের সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করল রাজ্য। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের পক্ষে এই দাবি করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। মামলাকরীদের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল একই দাবিতে অনড় থাকেন।
এ দিন ঘরছাড়াদের হলফনামা দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এ দিকে বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) এ দিন আদালতে জানিয়েছে, তাদের হাতে থাকা প্রায় সব মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে চলছে এই মামলার শুনানি।
এ দিন আদালতে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল দাবি করেন, এখনও ভয়ে ঘরে ফিরতে পারছেন না শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে রিপোর্ট দিয়ে এজি বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যে।’
টিব্রেওয়াল এ দিন ফের ঘরছাড়াদের জন্য সওয়াল করেন। ঘরছাড়াদের যাবতীয় তথ্য দিতে বলেন বিচারপতি। যদিও এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের তরফে রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি জানান, রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ঘরছাড়াদের তালিকায় ২৪৩ জনের নাম ছিল। এদের মধ্যে ৯ জন দুবার করে একই অভিযোগ করেছেন। ১১৭ জন বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ২২ জনের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি, ভুল মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। ৮৬ জন বাড়ি ফিরতে চাননি। একজন মারা গিয়েছেন।
এজি আরও জানান, অনেকে পড়াশোনার জন্য বাইরে বসবাস করছেন। তাঁরা ফিরতে চান না। এই রিপোর্ট পেশ করে এজি বলেন, ‘যে তালিকার কথা বলা হয়েছে সেটি বোগাস।’
এজির দাবি মানতে চাননি প্রিয়াঙ্কা। তাঁর বক্তব্য এদের প্রত্যেককে আদালতে আনার নির্দেশ দেওয়া হোক। তিনি এদের আদালতে হাজির করতে চান। প্রধান বিচারপতি জানান, কোভিডের সময় দুই শতাধিক মানুষকে আদালতে আনা সম্ভব নয়, তাই ঘরছাড়াদের হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। হলফনামায় সমস্যার কথা জানাতে বলেন প্রধান বিচারপতি।
এ দিন আদালতে সিট রিপোর্ট দিয়ে জানায় তাদের হাতে থাকা সব মামলার তদন্ত প্রায় শেষ। সিটের তরফে জানানো হয়েছে, ২ টি বাদে সব মামলা শেষ হয়েছে। দুটি নতুন মামলা রয়েছে, যেগুলি সিবিআই পাঠিয়েছে, সেগুলি এখনও বাকি। সিটের তদন্তকারীদের দাবি, মোট ৩২৩ টি অভিযোগ ছিল। কিন্তু একই নামের অনেকগুলো অভিযোগ থাকায় সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৯০ টি। এর মধ্যে ১৩০টি কেস ক্লোজ করা হয়েছে জিডি নেওয়ার পর। ১০৪ টি এফআইআর হয়েছে, ৬২টি মামলায় চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, ৮ টির তদন্ত চলছে। ২৩ টি মামলা সিবিআইকে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে, সিবিআই জানিয়েছে তাদের হাতে ৫১টি মামলা ছিল। ৪৮ টি মামলা দিয়েছিল মানবাধিকার কমিশন। তিনটি অন্য জায়গা থেকে আসে। ২০ টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ২৮ টি মামলার তদন্ত চলছে তবে চার্জশিট দেওয়া হয়নি। ১৯৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : Review Meeting: কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ৯ রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য