কলকাতা: সিবিআই-এর হাত থেকে রেহাই পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তদন্তে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোন কড়া পদক্ষেপ যাতে না নেওয়া হয়, এই আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করলেন বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ভোট-পরবর্তী অশান্তির মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে ইতিমধ্যেই নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। বৃহস্পতিবারই এই মামলার উঠবে আদালতে। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ এই মামলা শুনবেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
গত ২ মে একুশের নির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন বীরভূমের গোপালনগর গ্রামে খুন হন গৌরব সরকার নামে এক বিজেপি কর্মী। অভিযোগ, বাড়ির অদূরেই তাঁর ওপর হামলা চালায় কয়েকজন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে চলে হামলা। রাস্তায় ফেলে বেপরোয়া মারধর করা হয় তাঁকে। মাথায়, বুকে পিঠে একাধিক ক্ষত তৈরি হয় গৌরব সরকারের। মাথায় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকরা তেমনই জানিয়ে দেন রিপোর্টে। ঘটনায় উঠে আসে বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম। যদিও এফআইআর-এ তাঁর নাম নেই। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে গ্রেফতার করা হয় দিলীপ মৃধা নামে এক ব্যক্তিকে। তদন্ত যত এগোয়, উঠে আসে একাধিক তৃণমূল নেতার নাম। নোটিস পাঠানো হয় ইলামবাজারের তৃণমূলের সম্পাদককে। অনুব্রত মণ্ডলের নামেও জারি হয় নোটিস।
গত শুক্রবার ২৮ জানুয়ারিও অনুব্রত মণ্ডলকে তলব করে সিবিআই। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দর্শিয়ে সেই হাজিরা এড়িয়ে যান অনুব্রত। সিবিআইকে চিঠি দিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, শারীরিক ভাবে তিনি অসুস্থ। তিনি সিবিআই-এর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তাঁর নেই। হাজিরা দেওয়ার জন্য বেশ কিছুটা সময় চেয়ে নেন তিনি।
তাঁর শারীরিক অসুস্থতার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কারণ ২৮ জানুয়ারি, যে দিন অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআই হাজিরা এড়িয়ে যান, সেদিনই তাঁকে দেখা যায় বীরভূমে এক দলীয় কর্মসূচিতে। এরপর ফের তাঁকে তলব করে সিবিআই। হাজিরা এড়ান আবারও।
বীরভূমে বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় এফআইআর-এ সরাসরি নাম নেই অনুব্রত মণ্ডলের। কিন্তু গোয়েন্দাদের দাবি, এই খুনের মামলায় অনুব্রতকে জেরা করা একান্ত জরুরি। এই মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে তাঁর থেকে। সেই কারণেই বারবার তলব করা হচ্ছে তাঁকে।
কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল আগে থেকেই সিবিআই-এর বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ তৈরি করতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন। আদালতের অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী জানিয়েছেন, খুনের মামলার তদন্তে তাঁর মক্কেল যে কোনও ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু সিবিআই যাতে কোনও কড়া পদক্ষেপ না করে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রশ্ন, সিবিআই-এর গ্রেফতারির ভয় পাচ্ছেন কি তৃণমূলের বাহুবলী নেতা?
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: নলহাটি-শীতলকুচির মামলাতেও অধরা অভিযুক্তরা, পুরস্কার ঘোষণা করল সিবিআই