কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় প্রায় প্রত্যেকটি কেসেরই তদন্ত এগিয়েছে ঝড়ের গতিতে। কিন্তু কাঁকুরগাছির বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় তদন্তভার কোথাও গিয়ে যেন থমকে! কারণ অভিযুক্তদের এখনও পর্যন্ত টিকিও খুঁজে পাননি তদন্তকারীরা। একাধিকবার অভিযুক্তদের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। প্রত্যেকেই ঘরছাড়া। কারোর বাড়িতে তালা ঝুলছে, কারওবা পরিবারের সদস্যরা দিয়েছেন নেতিবাচক উত্তর। কাঁকুরগাছি মামলায় এবার অভিযুক্তদের ধরতে নয়া পদক্ষেপ তদন্তকারীদের। অভিজিৎ সরকারের খুনের মামলায় ৫ অভিযুক্তের খোঁজ পেতে নগদ পুরস্কার ঘোষণা করল সিবিআই।
ভোট-পরবর্তী হিংসায় এই প্রথম অভিযুক্তদের খোঁজ পেতে নগদ টাকা ঘোষণা করা হল। নগদ ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। শিয়ালদহ আদালতের নির্দেশের পর অভিযুক্তদের নাম ও ছবি-সহ এই পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন এবং লিফলেট বিলি মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে এটাও নিশ্চিত করা হয়েছে, এই অভিযুক্তদের সম্পর্কে যিনি খোঁজ দেবেন তার নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। অভিযুক্তদের তথ্য পেতে সিবিআই-এর যোগাযোগের নম্বর সহ প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, চার অভিযুক্তের বাড়িতে অক্টোবরের শুরুতেই হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেদিন এক্কেবারে সাতসকালেই চার অভিযুক্তের বাড়িতে আকস্মিক পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। ওই চার জনের নাম রয়েছে চার্জশিটে। চার জনের বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কিন্তু সেদিনও তিন অভিযুক্তকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু কোনও ইতিবাচক তথ্যও হাতে পাননি তদন্তকারীরা। এরপরও চলে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি। কিন্তু একেবারে ‘গায়েব’ অভিযুক্তরা। এবার অভিযুক্তদের ওপর চাপ বাড়াতে নতুন রণকৌশল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার।
ভোট গণনার পরের দিনই মৃত্যু হয় বেলেঘাটার বাসিন্দা বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের। গলায় তার পেঁচানো উদ্ধার হয় অভিজিৎ সরকারের মৃতদেহ। তাঁর পরিবার প্রথম থেকেই দাবি তোলে, বিজেপি করার অপরাধে অভিজিৎকে খুন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে নিহতের পরিবার। তদন্তের স্বার্থে তাঁর দেহ সৎকার করা হয়নি। ১৩৬ দিন পর সৎকারের অনুমতি পায় পরিবার।
সিবিআই তদন্ত ভার নেওয়ার পর থেকেই এই ঘটনায় একাধিকবার অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। কখনও বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও আবার নিজাম প্যালেস কিংবা সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হয়েছেন বিশ্বজিৎ নিজে।
অভিজিতের মায়ের বয়ান রেকর্ড করা হয়। দীর্ঘ কয়েক মাস লাশকাটা ঘরে পড়েছিল অভিজিতের দেহ। শেষে ডিএনএ রিপোর্টে দেখে ভাইয়ের শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করেছেন দাদা। সেপ্টেম্বরে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। সেপ্টেম্বরেই চার্জশিট জমা করেছে সিবিআই। ২০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে দাঁত কামড়ে পড়ে রয়েছেন অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ। আর এদিকে, বিশ্বজিৎই এই মামলায় সিবিআই-এর প্রধান হাতিয়ার। ইতিমধ্যে একবার খুনের হুমকিও পেয়েছেন বিশ্বজিৎ। লালবাজারে অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি। মামলার গতি অভিযুক্তদের গ্রেফতারি না পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে।