কলকাতা: তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছিলেন প্রবীর ঘোষাল। কিন্তু সেখানে তিনিও আর থাকতে পারছেন না। কেন থাকতে পারছেন না, তা জানিয়ে তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় আগেই কলম ধরেছিলেন। এ বার ফের আগুনে-কলম ছোটালেন প্রবীর। স্পষ্টই পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামে লিখলেন, ‘জননেত্রীর সঙ্গে তুলনীয়া কেবল ইন্দিরা’।
তৃণমূল মুখপত্রে ঠিক কী লিখেছেন অধুনা বিজেপি নেতা প্রবীর ঘোষাল? তিনি লিখেছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল রাজনৈতিক ক্ষমতায় ভর করে উঠে আসেননি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আবাল্য সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি আজ জনগণমন অধিনায়িকার স্থানে পৌঁছেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজনৈতিক সচেতন একটি রাজ্যে তিন-তিনবার বিপুল জনসমর্থন আদায় করে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে আসীন হয়েছেন।’
এখানেই না থেমে আরও লিখেছেন, ‘মমতা কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী হওয়ার আগে কেউ আঁচ করতেই পারেনি তারমধ্যে প্রশাসকের অসাধারণ প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে।’
পাশাপাশি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োজিত বেশ কয়েকটি জনহিতকর প্রকল্পের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রবীর আরও লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘গরিবী হটাও’ আওয়াজ তুলে একসময় ইন্দিরা গান্ধী দেশের আমজনতার মনে দাগ কেটেছিলেন।…কিন্তু মমতার কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী-সহ প্রায় ১০০ টি জনমুখী কর্মসূচি যেভাবে দেশের সব রাজ্যে প্রভাব ফেলেছে তার নজির নেই। ভারতবর্ষের কোনও মুখ্য়মন্ত্রীর এই রেকর্ড নেই। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর কর্মসূচি হল দুয়ারে সরকার। দেশের তাবড় মুখ্যমন্ত্রী এখন মমতার আবিষ্কার করা এই কর্মসূচি রূপায়ণে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’
গোটা রচনায় কেবল পূর্বতন জননেত্রীর গুণগানই করেই থামেননি প্রবীর, তাত্পর্যপূর্ণভাবে, একেবারে শেষ অনুচ্ছেদে লিখেছেন, ‘কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই তো দূর অস্ত, জনমনে একটা ইস্যুতেও আন্দোলনে দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস।…স্বভাবতই নিজের কাজ ও অদম্য সংগ্রামের ভাবমূর্তি দেশের প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় চলে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।’
সরাসরি, বিজেপির বিরুদ্ধে মন্তব্য না করলেও, প্রবীর তাঁর লেখনীতে যেন খানিকটা স্পষ্টই স্বীকার করেছেন, জাতীয় রাজনীতিতে মোদী বিরোধী মুখ হতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত, এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক মহলের।
এর আগেও তৃণমূলের মুখপত্রে কলম ধরেছেন প্রবীর। লিখেছিলেন, ‘বিজেপিতে অসংখ্য শাখা সংগঠন। ৬০টিরও বেশি। পদাধিকারীরা সকলেই নিজেদের নেতা নেত্রী মনে করেন। কেউ কর্মী নন। তাঁদের সকলের আলাদা আলাদা দাবি সনদ। বেশিরভাগই অর্থকেন্দ্রিক।’ তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, বিজেপিতে কাজ করার থেকে টাকা চাওয়ার লোক বেশি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে প্রাক্তনমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে চাটার্ড বিমানে দিল্লী উড়ে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তারপর সেখানে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরেই পদ্মপতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখনও সেই দলেরই সদস্য। অথচ, সেই দলের বিরুদ্ধেই বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন প্রবীর।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তরপাড়ায়। কিন্তু প্রবীর ঘোষাল পরাজিত হন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে যেভাবে জলঘোলা শুরু হয়েছিল, ঠিক সে সময় প্রবীর ঘোষালকে নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। ত্রিপুরায় অভিষেকের হাত ধরে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে রাজীবের। প্রবীর ঘোষালের রাজনৈতিক অবস্থান এখনও ধোঁয়াশায়। তবে জাগো বাংলায় যেভাবে তিনি তাঁর বর্তমান দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তাতে ধন্দে রাজনৈতিক মহল।
যদিও, এর আগে জাগো বাংলায় কলম ধরার পর, প্রবীর ঘোষাল TV9 বাংলাকে জানিয়েছিলেন, তিনি এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাল ঢোল পিটিয়ে তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন না। বিজেপিতে গিয়ে তিনি কী কী অনুধাবন করেছিলেন, তাঁর একটি খসড়া তুলে ধরেছেন। এখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। প্রবীর ঘোষাল ইঙ্গিত, দিয়েছেন, আপাতত রাজনীতির থেকে দূরে থেকে লেখালেখিতেই নজর দেবেন।
তবে, লেখালেখি বলতে পরপর ‘জাগোবাংলা’-তেই প্রবীরের কলম ধরা নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তাহলে কি নিজের পুরনো দলেই ফিরতে চলেছেন প্রবীর? জল্পনা চলছেই।