
কলকাতা: শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় ফের গ্রেফতার করা হয়েছে ‘মিডিলম্যান’ প্রসন্ন রায়কে। আগে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে জামিন পান। কিন্তু এবার ইডি তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে বারবার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই অভিযোগ তুলেছিল, অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন প্রসন্ন। মঙ্গলবার সেই একই বিষয় আদালতে জানাল ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়ে নিয়োগপত্র দিয়েছেন প্রসন্ন রায়। ১০০ কোটির উপরে টাকা তুলেছেন চাকরি দেওয়ার নামে।
গতকাল আদালতে ইডি-র আইনজীবী সওয়াল করেছেন, ৯৫২ জন প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৩ জন প্রার্থী প্যানেল বাতিল হওয়ার পরও চাকরি পেয়েছেন। মোট ২ হাজার ৮১ জনকে প্রসন্ন রায় চাকরি দিয়েছে অর্থের বিনিময়ে। এর মধ্যে নবম -দশমে ১ হাজার ১৩৫ এবং একাদশ-দ্বাদশ ৯৪৬ জনের চাকরি হয়েছে।
এ দিন ইডি আদালতে এও জানিয়েছে, প্রসন্নর বাড়ি অফিস তল্লাশি করে ৪৯২টি দলিল পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে অফিস থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৩৯২টি জমির দলিল। সেই জমিগুলি ২০১৬-২০২১ সালে কেনা হয়েছে পরিবারের নামে। জমির ভ্যালু কম দেখানো হয়েছে। প্রসন্ন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ৯০টির বেশি সংস্থা রয়েছে। ২০০ বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে যেখানে প্রচুর টাকা ঢুকেছে। এরপরই ইডি তাঁকে ১৪ দিনের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে।
যদিও, পাল্টা প্রসন্ন রায়ের আইনজীবী আদালতে যে কোনও শর্তে তাঁর জামিনের আবেদন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলের নামে ৫০টির বেশি সংস্থা আছে এটা যেমন সত্যি, তেমনই তিনি একজন নামকরা ব্যবসায়ী। ১০ কোটি টাকার উপরে আয়কর জমা করেন এটাও সত্যি। এর পাশাপাশি তাঁর আইনজীবী জানিয়েছে, প্রসন্নর বিরুদ্ধে তল্লাশি চালিয়ে কোনও টাকা মেলেনি। কিছু জমির নথি পেয়েছে। তাও বৈধভাবে কেনা।
উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এই প্রসন্ন রায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে দাবি ইডি এবং সিবিআইয়ের। তদন্তকারীদের দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসপি সিনহা, জীবনকৃষ্ণ সাহা-সহ শিক্ষা দফতরের বহু কর্তাব্যক্তির কাছের লোক ছিলেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে জামিন দিয়েছিল।গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি – নিয়োগ দুর্নীতির দুই মামলাতেই জামিন মিলেছিল প্রসন্নর। তবে তাঁকে জামিন দিলেও, শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যেমন চলছে, তেমনই চলবে। এরপর সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি), দিনভর ইডি তল্লাশি চালায় প্রসন্নর বাড়ি-অফিসে। এমনকী ইডি দফতরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। তবে তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট না থাকায় গ্রেফতার করা হয়।