‘সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতার কথা দলকেও জানিয়েছি’, দেড় ঘণ্টার ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ শেষে বললেন রাজীব
জল্পনা বাড়িয়ে শনিবার বিকেলে কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) বাড়িতে হাজির হন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। 'কোনও রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি' বলেই দাবি দুই নেতার।
কলকাতা: ‘রাজনৈতিক কোনও আলোচনাই হয়নি। নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ। দীর্ঘ দিনের দাদা তথা বন্ধু কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করে গেলাম।’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) বাড়ি থেকে বেরিয়ে এমনটাই বললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। গত সপ্তাহে বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট রাজীবের। আর মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরের দিনই একেবারে গোপনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়াই কুণালের বাড়িতে হাজির। এ সবের পর রাজীবের মুখে বারবার ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ শুনেও জল্পনা কমছে না রাজনৈতিক মহলে। এ দিন প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় তাঁদের। বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে সেই বৈঠক।
শনিবার বিকেলে আচমকাই কুণাল ঘোষের সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে যান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তালা লাগিয়ে ভিতরে চলে বৈঠ। বাইরে সংবাদমাধ্যমের ভিড় দেখে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসেন কুণাল ঘোষ। তিনি জানান, এক আত্মীয়কে দেখতে ওই এলাকায় এসেছিলেন রাজীব। সেখান থেকেই ফোনে জানতে চান কুণাল বাড়িতে আছে কিনা। এরপরই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজীব। এতে কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ নেই বলেই মন্তব্য করেন কুণাল। এরপরই রাজীবকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসেন কুণাল। রাজীবের মুখেও বারবার ‘সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যাখ্যাই শোনা গেল এ দিন। রাজীব জানালেন এক কাপ চা খেতেই কুণালের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু মুকুলের দলবদলের পরের দিনটাকেই কেন চা খাওয়ার জন্য বেছে নিতে হল রাজীবকে? সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে এক বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টে নজর কেড়েছিলেন রাজীব। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর সেই পোস্ট থেকেই জল্পনার সূত্রপাত। সেখানে তিনি বিজেপির সমালোচনা কর লিখেছিলেন, “সমালোচনা তো অনেক হল….মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে আসা সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালভাবে নেবে না।” এ দিনও সেই মন্তব্য নিয়ে নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেন তিনি। বললেন, ‘বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা একটা সরকারের মাত্র এক মাস হয়েছে। এই অবস্থায় ৩৫৬ ধারার জুজু দেখানো কিংবা বিভাজনের রাজনীতি করার আমি বিরোধী। আমি গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী। আর সে কথা দলকেও জানিয়েছি। অর্থাৎ দলের কিছু অবস্থান নিয়ে যে তাঁর মত পার্থক্য রয়েছে, তা স্বীকার করলেন রাজীব।
আরও পড়ুন: ‘অশুভ লোক’ সব্যসাচীকে ফেরাবে না তৃণমূল, ‘বিশ্বাস’ করেন সুজিত
তবে দলবদলের জল্পনা নিয়ে কিছুতই ঝেড়ে কাশলেন না তিনি। সাফ জানালেন কুণালের সঙ্গে সাক্ষাতের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় আনেক দিন দেখা হয়নি, তাই দেখা করতে এসেছেন। কিন্তু সূত্র বলছে, রাজীবেরও ঘাসফুলে ফিরতে আর খুব বেশি দেরি নেই। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নরমপন্থী’দেরই দলে নেওয়া হবে। যাঁরা দল ছাড়লেও তৃণমূল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে অপমান করেননি তাঁদেরই ফেলা হচ্ছে এই নরমপন্থী’দের দলে। সেই যুক্তিতেই নেওয়া হয়েছে মুকুলকে। রাজীবের ক্ষেত্রেও সেই একই যুক্তি খাটবে কি না, তা সময়ই বলবে।