কলকাতা: ট্যাবলো বিতর্কে রাশ টানা যাচ্ছে না। অবশেষে, প্রজাতন্ত্র দিবসের (Republic Day) উদযাপনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের বাতিল করা দুটি ট্যাবলোই থাকছে কুচকাওয়াজে, ঘোষণা নবান্নের। পাশাপাশি, গোটা অনুষ্ঠানটি মাত্র ৩০ মিনিটের হবে। করোনা পরিস্থিতির জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে নবান্ন। পাশাপাশি, ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে কোনও মিটিং মিছিল করা হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, সোমবারই মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই আগামী ২৩ জানুয়ারি ও ২৬ জানুয়ারি কীভাবে উদযাপন করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা চলে।
সেই বৈঠকের পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করা হবে। মাত্র ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠান করা হবে। রেড রোডের কুচকাওয়াজে থাকবে দুটি ট্যাবলো। একটি নেতাজির, অন্যটি পুলিশের। উল্লেখ্য, নেতাজির এই ট্যাবলোটির জন্য অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্র।
অন্যদিকে, ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনেও কাটছাঁট করা হবে। ওইদিন কোনও মিটিং-মিছিল করা হবে না, বলেই খবর নবান্ন সূত্রে। পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতির জন্য গতবছরের চেয়ে আরও কমজনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নেতাজির জন্মদিন পালিত হবে।
তবে, ট্যাবলো বাতিল নিয়ে বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে না। বাংলার ট্যাবলো বাদ কেন? এই প্রশ্ন তুলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-কে ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এ বার, ট্যাবলো বিতর্কে রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করলেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁর দাবি, বাঙালির কাছে একটা আবেগের নাম নেতাজি। তাহলে, সেই ট্যাবলো যেন বাতিল না হয়, গোটা বিষয়টি পুনর্বার বিবেচনা করে দেখুন প্রধানমন্ত্রী এমনটাই অনুরোধ তথাগতর।
অন্যদিকে, বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, “রাজ্যে তৃণমূল সরকার মনে করে বাংলা একটা পৃথক রাষ্ট্র। কেন্দ্রে তো বিজেপি সরকার নেই। কেন্দ্রে রয়েছে ভারত সরকার। এখন, তৃণমূল সরকার যদি মনে করে নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করবে, তাহলে তো কিছু করার নেই। তাহলে তো বিরোধ হবেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো আগেরবার বলেছিলেন কন্যাশ্রী নিয়ে ট্যাবলো বানিয়ে পাঠাবেন! যা চাইবেন তা হবে না কি!”
এদিকে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেছেন, “বাংলার সঙ্গে চিরকালই এই ধরনের আচরণ করা হয়। এই ধরনের চেষ্টা বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বাংলার মানুষকে অপমান। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এই ট্যাবলো যেন বাতিল না করা হয় সেই নিয়ে আবার কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হবে।”
এখানেই থামেনি ট্যাবলো বিতর্ক। এই নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ নেতাজি-কন্যা। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ” নেতাজি চিরকালই রাজনীতির শিকার। তাঁকে নিয়ে বরাবর রাজনীতিই হয়ে এসেছে। গত বছর বাংলায় ভোট ছিল। তাই, নেতাজির জন্মদিন ধূমধাম করে পালিত হয়। কিন্তু এ বছর, আর ভোট নেই।”
এদিকে, কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ট্যাবলো অনুমোদনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর নয়। তা অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি। নেতাজির সঙ্গে কোনও বিরোধ কেন্দ্রের নেই। কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসের এ বছরের থিম ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। সেই কথা মাথায় রেখেই ট্যাবলো নির্বাচন করা হয়েছে। তবে, কেবল বাংলা নয়, ট্যাবলো বাতিল হয়েছে তামিলনাড়ুরও। উল্লেখ্য, এই দুই রাজ্যই অ-বিজেপি শাসিত। আর এতেই কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, এর আগেও প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো পাঠানোকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তৈরি হয়েছিল। ২০২১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসেও রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, জল ধরো জল ভরো-র মতো বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প নিয়ে পাঠানো ট্যাবলোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে বাকযুদ্ধ চরমে ওঠে। ফের এ বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াতে আবার নতুন করে সংঘাত হতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।