কলকাতা : রুদ্রনীল ঘোষ। তিনি শুধু অভিনেতা নন, এখন তিনি রাজনেতাও বটে। আপদমস্তক বাম ঘরানায় বেড়ে ওঠা। বাম মনষ্ক একটি পরিবারে বেড়ে ওঠা। শুরুটাও বাম রাজনীতি দিয়েই। কিন্তু তারপর তৃণমূল। বর্তমানে বিজেপি। বার বার দল বদল। এই নিয়ে কম বক্রোক্তি শুনতে হয়নি তাঁকে। বিভিন্ন বাঁকা কথাও শুনতে হয়েছিল তাঁকে। ট্রোলড হতে হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁকে নিয়ে মিম ছড়িয়েছিল নেট দুনিয়ায়। TV9 বাংলার কথাবার্তা অনুষ্ঠানে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই সব খারাপ লাগার কথা বললেন অভিনেতা তথা বঙ্গ বিজেপির অন্যতম তারকা মুখ রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। বললেন, “একটি রাজনৈতিক দল গিরগিটি, টিকটিকি বলে আমাকে বিভিন্ন রকমের উপমা দিয়েছিল। আমার নামে মিম বের করেছিল। আমি খুব হাসতাম। কারণ আমি জানতাম, তাঁরা আমাকে আক্রমণ করে, নিজেদের দোষ লুকানোর চেষ্টা করছেন। আমার মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।”
কিন্তু কেন বার বার দলবদল? যার জন্য এত গিরগিটি, টিকটিকি উপমা শুনতে হয়েছে তাঁকে? সেই কথাও খোলসা করলেন রুদ্রনীল। বললেন, “আমি ২০০৯ সালে সিপিএমের পার্টি মেম্বারশিপ ছাড়ি। তৎকালীন শাসক দলের জনসংযোগের থেকে সরে গিয়ে, নিজেদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জায়গায় চলে যাওয়ার ফলে যাঁরা মাটি কামড়ে কাজ করতাম, তাঁরা মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতাম। তাই শুধু আমি নই, আমার মতো বহু মানুষ সেই সময় ছেড়ে বেরিয়ে চলে আসেন ২০০৯ সালে। আমরা যেটা বলেছিলাম, ২০১১ সালে সেই কথাটার প্রমাণ মানুষই দিয়ে দেন। সরকার বদলে যায়।”
রুদ্রনীল আরও বলেন, “২০১১ সালে সরকার যখন বদলে গেল, তখন অনেক বুদ্ধিজীবীরাই ছুটে গিয়েছিলেন অভিনন্দন জানাতে। আমি কিন্তু যাইনি। কারণ, আমার কাছে পরিবর্তন মানে উপর উপর পরিবর্তন নয়। জং ধরা ব্রিজের উপর যদি আমি নীল সাদা রং করে দিই বা টুনি লাইট লাগিয়ে দিই, তার মানে পরিবর্তন নয়।” রুদ্রনীলের কথায়, “তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে নিকাশি ব্যবস্থা, রাস্তার আলো, সেই সব কাজ করা শুরু করেছিল। টলিউড শিল্পীদের জীবিকার ব্যবস্থাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করে দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গকে বলা হয় দেশের সংস্কৃতির রাজধানী। সেখানে এই পেশার জন্য শাসক দল যখনই এটা করা শুরু করে, তখন তো তাকে সমর্থন করতেই হয়। আমাকে বার বার ডাকা হয়েছিল নেতা মন্ত্রীদের দিয়ে। অনেক পরে আমি যাই।” সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি, “২০১৩-১৪ সালে আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি নিজে থেকে কোথাও যাইনি। যাঁরা এমন বলেন তাঁরা মিথ্যা কথা বলেন।”
এরপর তৃণমূলে থাকাকালীন মমতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কেও বেশ ভাল ছিল। একাধিক সরকারি বড় পদের দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রথমে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং পরবর্তীতে রাইট টু পাবলিক সার্ভিস কমিশনার থাকাকালীন তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। রুদ্রনীলের কথায়, “২০১৭ সালের পর থেকে যখন দেখতে পাই, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা পাঠানো হয়, সেগুলি চুরি হচ্ছে। যারা চুরি করেছে, মানুষের সামনে কান ধরে উঠবোস করছে। সরকারি টাকা চুরির অপরাধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাউকে জেলে পুরছেন না। তাদের তিনি দল থেকে বের করলেন না। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ২০১৭ সাল থেকে আমি দূরে সরতে শুরু করি। এরপর ২০১৯ সালে যখন একুশে জুলাই হয় আমি যাইনি।”
রুদ্রনীলের বক্তব্য, “সেই সময় বিজেপির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ ছিল না। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে একুশে জুলাই। তখনও ফলাফল বেরোয়নি। তখন তো বিজেপি এত আসন পাবে কেউই জানতেন না। তাহলে সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলাম না কেন আমি? যাঁরা এই কথাগুলি বলছেন, তাঁরা কি সেই সময় চোখ বন্ধ করে ছিলেন?”
আরও পড়ুন : Rudranil Ghosh Interview: ‘দুয়ারে সরকারের প্ল্যান আমার’, মমতার ‘তুরুপের তাসকে’ ট্রামকার্ড রুদ্রনীলের!